কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দিন থেকে জিঞ্জিরাম নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি কমলেও বন্যাদুর্গত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী আছেন। প্লাবিত সড়কের পানি মাড়িয়ে কিংবা নৌকায় করে লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, যাদুরচর, শৌলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জিঞ্জিরাম ও কালো নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে উপজেলার ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। রৌমারী উপজেলার সদর, যাদুরচর ও শৌলমারী ইউনিয়নের নওদাপাড়া, চান্দারচর, রতনপুর, বেহুলারচর, মোল্লারচর, খাটিয়ামারী, বোল্লাপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, ভুন্দুরচর, ইজলামারী, পূর্ব ইজলামারী, বারবান্দা, উত্তর বারবান্দা, দক্ষিণ বারবান্দা চুলিয়ারচর, ঝাউবাড়ী, বড়াইবাড়ী ও আগলারচর এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লোকজন। রৌমারী সদর ইউনিয়নের ইজলামারী থেকে বারবান্ধা যাওয়ার পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে আছে। নতুন বন্দর থেকে নওদাপাড়া-চান্দারচর পাকা সড়কে প্লাবিত হয়ে পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বারবান্দা গ্রামের বাসিন্দা আমেনা খাতুন বলেন, পাঁচ দিন থেকে বাড়ির চারদিকে পানি। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব বিপদে আছেন। বাজার যাওয়ার রাস্তা পানির নিচে ডুবে আছে। গবাদিপশুর খড় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বানের পানি দ্রুত নেমে না গেলে গরু নিয়ে বিপদে পড়তে হবে।
সপ্তাহ ধরে উজানের ঢলে এসব এলাকায় বন্যার পানিতে কৃষকের শাকসবজি খেতে ও রোপা আমন ধান ডুবে গেছে। বকবান্দা গ্রামের কৃষক হজরত আলী বলেন, ‘এনজিও থাকি ঋণ করি তিন বিঘা জমিত ধানের আবাদ করছিনু। এলা ধানের ধর (শিষ) বেড় হওয়ার সময়। হঠাৎ করি উজানের ঢলে বানের পানিতে সব ডুবি গেইছে। এল্যা এই পাহাড়ি ঘোলা পানি দ্রুত না নামলে বিপদ হয়া যাইবে। ধান না হইলে কিস্তি দেমো কি দিয়া?’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমন ধানের ১ হাজার ১১৫ হেক্টর, শাকসবজির ৭১, মাষকলাইয়ের ৩৬, বাদামের ১৯, পেঁয়াজের ১৩ এবং অন্যান্য ফসলসহ প্রায় ১ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। পানি দ্রুত না নামলে কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী আনিসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ মেট্রিক টন চালসহ ১ হাজার ৪০০ শুকনা খাবারের প্যাকেট বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ডুবে যাওয়া ফসলি জমির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।