সুনামগঞ্জের ডিসির সাক্ষাৎকার

ইচ্ছে করলেই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সময় বেঁধে করা যায় না

সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৫৮টি হাওরে এবার ১ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে ৭৪৫ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। এই কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। এবার বাঁধের কাজে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব, কাজে অনিয়ম ও গাফিলতি থাকায় সময়মতো কাজ হয়নি। ২০১৭ সালের পর থেকে হাওরে নতুন নীতিমালায় বাঁধের কাজ হচ্ছে। কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থায় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও হাওরে বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী
দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী
প্রশ্ন

প্রথম আলো: হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বলবেন?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: হাওরে বাঁধের মূল কাজটি হয় মাটির। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের সব প্রকল্পেই মাটির কাজ শেষ। এখন বাঁধে আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। যেমন বাঁধের ঢাল ও উচ্চতা ঠিক করা, মাটি শক্তকরণ, বাঁশ দিয়ে আড় দেওয়া, ঘাস লাগানো ইত্যাদি। এ ছাড়া যেখানে ছোটখাটো ত্রুটি দেখা দিচ্ছে, সেগুলো সারানো হচ্ছে। এটি চলবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এবারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি কেন?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: হাওরে বাঁধ নির্মাণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই এলাকার ভূপ্রকৃতি ভিন্ন। ইচ্ছে করলেই সবকিছু একেবারে সময় বেঁধে করা যায় না। যখন কাজ শুরু করার কথা, তখন হাওরের অনেক জায়গায় পানি থাকে। তাই প্রকল্প গ্রহণে সমস্যা হয়। আবার কাজ শুরু হলে অনেক স্থানে মাটি পাওয়া যায় না। সংকট রয়েছে খননযন্ত্রের। প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনেও অনেক সময় বিলম্ব হওয়া কোথাও কোথাও কাজ শুরু করতে দেরি হয়। তাই সব প্রকল্পের কাজ একই সময়ে শেষ হয় না। তবে নির্ধারিত সময়ে বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজই এবার শেষ হয়েছে। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মাটির কাজ করা যেতে পারে। পাহাড়ি ঢল সাধারণত আসে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কাজে তদারকির অভাব, অনিয়ম-গাফিলতির অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে তদারকি বেশি আছে। শুরু থেকে আমি নিজে মাঠে আছি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো হাওরে যাচ্ছি। কাজটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করছি। মাঠে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন। তাঁদের এলাকা ভাগ করে দেওয়া আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। মন্ত্রণালয়ের তিনটি দল মাঠে আছে। বাঁধের কাজে আমাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ আছে। তাই কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম বা গাফিলতির সুযোগ নেই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এবার অতীতে যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রকল্প ও প্রাক্কলন দুটিই বেশি। এটি কেন হলো?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: গত বছর সুনামগঞ্জে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। আবার নানা কারণে ব্যয়ও বেড়েছে। অনেক স্থানে কাজের সুবিধার্থে একটি প্রকল্প ভেঙে একাধিক প্রকল্প করা হয়েছে। যে কারণে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে। বরাদ্দ যেখানে বেশি মনে হচ্ছে, সেটি আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। কোথাও কোথাও কমানো হয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অতিরিক্ত বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে এবারও কথা হচ্ছে। এ নিয়ে কী বলবেন?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: বিষয়টি আপেক্ষিক। আপনি যেটাকে অপ্রয়োজনীয় বলছেন, আরেকজন সেটাকে প্রয়োজনীয় মনে করেন। বাঁধের কাজের প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞ দল যাচাই-বাছাই ও সমীক্ষা করে নিয়ে থাকে। অনেক স্থানে স্থানীয় লোকজনের মতামত নেওয়া হয়। আবার স্থানীয়ভাবে এসব নিয়ে নানা মতবিরোধও থাকে। তারপরও আমরা কোনো স্থানে কোনো প্রকল্প নিয়ে আপত্তি থাকলে সেটি সম্পর্কে খোঁজ নিই, সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিছু কিছু জায়গায় প্রকল্প বাদও দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় মনে হয়েছে ফসল রক্ষার স্বার্থে নতুন করে প্রকল্প নেওয়া দরকার। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: এই যে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলো না। এতে কি বাঁধ ঝুঁকিতে আছে?

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী: মূল কাজ তো শেষ, তাই বাঁধে কোনো ঝুঁকি নেই। এ সময়ে বৃষ্টি হলে আরও একটু ভালো হতো, মাটি আরও শক্ত হতো। কোথাও কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সেটি মেরামত করতে সুবিধা হতো। এবার শুরু থেকেই কঠোর তদারকি থাকায় কাজ ভালো হয়েছে বলে সবাই মনে করছেন। আমরা কৃষকের ফসল গোলায় না তোলা পর্যন্ত মাঠেই থাকব। যেখানে যে সমস্যা হবে, সেখানেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবেই সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।