পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে বিশেষ সার্ভিস চালু হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা (যাপ) এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
কিন্তু কাউন্টারগুলোতে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের অগ্রিম টিকিট নেওয়ার তোড়জোড় নেই। অথচ বছর তিনেক আগেও একই সময়ে লঞ্চের টিকিটের জন্য কাউন্টারে কাউন্টারে ছুটতেন যাত্রীরা।
ঈদের বিশেষ সার্ভিসের জন্য গতকাল বুধবার থেকে প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কেবিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, প্যারারা রোড ও নদীবন্দর ঘুরে কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি। কাউন্টারে কর্মরত ব্যবস্থাপক ও কর্মীরা অলস সময় পার করছেন।
মেসার্স সুরভী শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৪ এপ্রিল সদরঘাট থেকে বরিশালে বিশেষ সার্ভিস শুরু করব। এখনকার পালাভিত্তিক প্রথা তুলে দিয়ে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ এ সার্ভিসে যুক্ত হবে। গতকাল থেকে আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছি। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। কিন্তু অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের একেবারেই সাড়া কম।’
আজ দুপুরে নগরের প্যারারা সড়কে অ্যাডভেঞ্চারের টিকিট বুকিং কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান অবস্থা। কাউন্টারের কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. রাজীব বলেন, ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে এ সময় যাত্রীদের বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিটের চাহিদা বেশ থাকে, কিন্তু এবার কোনো চাহিদা নেই। অথচ একই সময় অন্য বছর তাঁদের হিমশিম খেতে হতো। পদ্মা সেতু চালুর পর দুই বছর চাহিদা একেবারেই কমে গেছে।
একই এলাকার সুরভী টিকিট কাউন্টারে গিয়েও একই অবস্থা দেখা গেল। কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. আফজাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো তেমন সাড়া পাচ্ছি না। দু-একজন যাত্রী মাঝেমধ্যে এসে খবর নিয়ে চলে যাচ্ছেন। দিন যত যাবে, সাড়া তত বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’
নগরের ফজুলল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় এমভি সুন্দরবন লঞ্চের কাউন্টারে গিয়ে কয়েকজন যাত্রীকে অগ্রিম টিকিট নিতে দেখা গেল। রাকিবুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর স্বজন জানালেন, তাঁর এক স্বজন ঈদে বাড়িতে আসবেন। এ জন্য অগ্রিম টিকিটের জন্য এসেছেন। টিকিট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বলে আজ নেননি। দু-এক দিন পর নেবেন।
কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. জাকির বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার টিকিটের চাহিদা বেশি বলে মনে হচ্ছে। দু-চার দিনের মধ্যে বেচাবিক্রি বেড়ে যাবে। পারাবাত-১৮ লঞ্চের টিকিট মাস্টার মো. তুহিন বলেন, ‘আমাদের লঞ্চে ২৬০টি কেবিনের মধ্যে ১০টি কেবিন ৫ এপ্রিলের জন্য বুকিং হয়েছে। আগের মতো এখন টিকিটের জন্য হাহাকার নেই।’
বরিশাল বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে যাত্রীর চাপ বাড়ায় নৌপথে সংকট দেখা দেয়। বরিশাল থেকে আধা ঘণ্টা পরপর বেসরকারি পরিবহন ও বিআরটিসির বাস ঢাকায় ছুটছে। আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টায় একটি বাস সর্বোচ্চ দুটি ট্রিপ দিত, এখন দৈনিক তিন থেকে চারটি ট্রিপ দিচ্ছে। এ ছাড়া গত দেড় বছরে দক্ষিণের ৬ জেলায় অন্তত ৫০০ নতুন বাস যুক্ত হয়েছে।
লঞ্চমালিকেরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর নৌপথে অন্তত ৬০ ভাগ যাত্রী কমে যায়। লোকসান এড়াতে তাঁরা লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন। আগে যেখানে ছয়টি লঞ্চ চলত, এখন সেখানে পালা করে দুটি লঞ্চ চলছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬ এপ্রিল রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি নৌপথে চলাচলের জন্য ১৩০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদে নৌপথে ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর ফিরতি যাত্রায় সাত দিন এ বিশেষ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে। এরপরও চাহিদা থাকলে সময়সীমা বাড়ানো হবে।
কয়েকজন লঞ্চমালিক জানান, এবার ঈদে লম্বা ছুটি পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও লম্বা ছুটির সম্ভাবনা আছে। এবার বেশিসংখ্যক যাত্রীর গ্রামে ফেরার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য শুরুতে চাহিদা কম থাকলেও শেষ মুহূর্তে চাহিদা বাড়তে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। পরদিন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার পয়লা বৈশাখের ছুটি। সেই অনুযায়ী পবিত্র শবে কদরের পর কেউ দুই দিন ছুটি নিলে টানা ১০ দিন বাড়িতে কাটাতে পারবেন। কারণ, শবে কদরের আগের দুই দিন শুক্র ও শনিবার। এমন পরিস্থিতিতে লঞ্চমালিকেরা কিছুটা আশার আলো দেখছেন।
ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী ‘সুন্দরবন নেভিগেশন’-এর পরিচালক ও যাপের সহসভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চ ব্যবসায় ধস নেমেছে। এখন প্রতিদিন দুটি লঞ্চ চলার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে একটি চালাতে হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে দুই প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ বাড়ানো হবে। লম্বা ছুটির কারণে ঈদের এক সপ্তাহ আগে লঞ্চের টিকিটের চাপ বাড়তে পারে। তবে চাপ বাড়লেও প্রস্তুতি থাকায় টিকিটের সংকট হবে না।