ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট উঁচু জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ভোলার প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দৌলতখান পৌর এলাকা ও মনপুরা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। দৌলতখানে চারটি পরিবার ও দুই ব্যবসায়ী ভাঙনের কারণে তাঁদের বসতঘর ও দোকান সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬৯ মিটার। যা ৮৯ সেমি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রায় তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এসব বাঁধ হুমকির মুখে পড়লেও শিগগিরই সংস্কার করা হবে।ভোলা পাউবো-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, তীব্র স্রোতে ভোলা সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর তীরে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে দক্ষিণে ব্যাংকের হাট, মাঝিরহাট, বাঁধেরবাজার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া রাজাপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদ থেকে জোরখাল পর্যন্ত, ইলিশার সোনাডুগি, নিচ কাচিয়া, তুলাতলি ইলিশবাড়ি থেকে দক্ষিণে শিবপুর ভোলা খালের মাথা পর্যন্ত, দৌলতখান উপজেলার মাঝিরহাট থেকে দৌলতখান পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমউদ্দিন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভোলা পাউবো-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, জলোচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের আঘাতে ভোলা সদর, দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার প্রায় তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এসব বাঁধ হুমকির মুখে পড়লেও শিগগিরই সংস্কার করা হবে।
দৌলতখান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারি বাড়ির দরজা থেকে পাতার খাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার মেঘনা তীরসহ বাঁধ ধসে মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় বাঁধের ওপর বসবাস করা চারটি পরিবার নিজেদের ঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলে মো. মামুন মাঝি জানান, বারবার ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি শেষবার এ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত রোববার রাতের জোয়ারে তাঁর সেই ঘরের জমিও মেঘনায় চলে গেছে। এখন তাঁর আর যাওয়ার জায়গা নেই। স্ত্রী সন্তানকে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে ঘরের আসবাব বাঁধের এক কোণে জমা করে রেখেছেন তিনি। যদি আবার কোথাও খাসজমি পান, তবে সেখানে ঘর তুলতে চান মামুন।
পাতার খাল মাছঘাটের আশপাশের প্রায় শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধের ওপর থেকে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর ব্যাপারী ও জয়নাল আবেদীনকে নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাকা ঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে ভোলার মনপুরা ইউনিয়নের পূর্ব আন্দির পাড় ও রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এলাকাটির কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। গত রোববার রাতের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাজিরহাট ও মনপুরা ইউনিয়নের পূর্বপাশে বাঁধের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
মনপুরা উপজেলা হাজিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, হাজিরহাটের পূর্বে পাশে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার জন্য বলা হয়েছে।
দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ কাজল জানান, তাঁর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাড়ে চার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকাংশে বাঁধ উপচে পানি স্থানীয় লোকজন জানান, বাঁধ না থাকায় চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ তিন দিন ধরে পানিবন্দী আছেন।
এসব বিষয়ে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ডিভিশন-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, গত তিন দিনের উচ্চ জোয়ারের ঢেউয়ের কারণে বাড়িতে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর আওতাধীন প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোথাও বাঁধ ছোটেনি। বাঁধ ভাঙতে শুরু করলে তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, মনপুরা, তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার আরও সাড়ে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে।