ধর্ষণ
ধর্ষণ

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের মামলায় এখনো শুনানি শুরু হয়নি

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার বিচার কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই। চার বছর আগের ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে এখনো শুনানি শুরু হয়নি।

প্রায় দেড় বছর আগে উচ্চ আদালত ওই ঘটনায় দায়ের করা ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার আদেশ দেন। তবে এর বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির দুটি মামলায় বিচার কার্যক্রম বন্ধ আছে। মামলা দুটি একসঙ্গে পরিচালনার জন্য বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গত বছর হঠাৎ করে আগের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে লিভ টু আপিল করা হয়। কিন্তু সেটি এখনো সুরাহা না হওয়া মামলার বিচার কার্যক্রম আর এগোয়নি।

শহীদুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, অভিযোগ গঠনের পর থেকেই দুটি মামলার অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে বাদীও প্রায় এক বছর ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। বাদী যোগাযোগ করলে তাঁরা আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে ওই তরুণীকে (২০) ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যান। তবে তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‌্যাব। আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পুলিশ।

ওই ঘটনায় ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা দুটি মামলা প্রায় এক বছর ধরে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ২০২২ সালের ১১ মে গণধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এর আগের বছর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি একই ট্রাইব্যুনালে অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়। দুটি মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি।

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে ওই তরুণীকে (২০) ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলি করতে উচ্চ আদালত আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। গত বছরের ২৬ জুন আপিল বিভাগের আইনজীবী অন রেকর্ড হরিপদ পাল স্বাক্ষরিত এক পত্রে বাদীপক্ষের আইনজীবী শহীদুজ্জামান চৌধুরীকে লিভ টু আপিল দায়েরের বিষয়ে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়। এর পর থেকে মামলার আর কোনো অগ্রগতি নেই।

এদিকে মামলার আট আসামি গ্রেপ্তারের পর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেই রয়েছেন। তাঁরা সবাই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁদের সংগঠনের কোনো পদ নেই। সিলেটের এমসি কলেজসংলগ্ন টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন তাঁরা।

বাদীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে আপসরফার অভিযোগ
এদিকে মামলার বাদী তরুণীর স্বামীর বিরুদ্ধে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আপসরফা করতে আসামিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আসামিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করায় বাদী বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন, এমন অভিযোগ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা সিলেটের বিভাগীয় প্রতিনিধি সৈয়দ আকরাম আল সাহান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেটের শাহপরান থানায় ওই জিডি করেন।

সৈয়দ আকরাম আল সাহান সংস্থার পক্ষ থেকে গৃহবধূ এবং তাঁর পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া গৃহবধূকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করেছিলেন।

এ ব্যাপারে সৈয়দ আকরাম আল সাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী বছরখানেক ধরে সংস্থার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। বছরখানেক আগে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আইনজীবীসহ সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সে সময় তিনি আসামিদের পক্ষ থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম যোগাযোগ করে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আপসরফা করার বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময় তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এমন ঘটনা আপস করা যাবে না; সংস্থা তাঁর পক্ষে রয়েছে।আইনি সব সহযোগিতা নেওয়া হবে। কিন্তু এসব আশ্বাস দেওয়ার পরও তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপস করেছেন বলে শুনেছি।’

সৈয়দ আকরাম আল সাহান আরও বলেন, মামলার বাদী যোগাযোগ বন্ধ করলেও তিনি খুদে বার্তা পাঠিয়ে খোঁজখবর নিতেন। ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করে খুদে বার্তা পাঠালে বাদী ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন।

মামলার কারণে বিভিন্ন হুমকির শিকার হয়েছেন। কিন্তু মামলার আর অগ্রগতি হয়নি। মামলার বাদী হওয়ায় দেশ ছেড়েও কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। মূলত বিচার বিলম্বিত হওয়ায় অনেকে অনেক কথা বলছেন। টাকার বিনিময়ে আপস করার কথা ভিত্তিহীন।
মামলার বাদী

টাকার বিনিময়ে আপসরফার অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার বাদী বলেন, মামলার কারণে তাঁরা বিভিন্ন হুমকির শিকার হয়েছেন। কিন্তু মামলার আর অগ্রগতি হয়নি। মামলার বাদী হওয়ায় দেশ ছেড়েও কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। মূলত বিচার বিলম্বিত হওয়ায় অনেকে অনেক কথা বলছেন। টাকার বিনিময়ে আপস করার কথা ভিত্তিহীন। মুখে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। যাঁরা এমন অভিযোগ করছেন, তাঁরা এসব ব্যাপারে প্রমাণ দিক।

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাদীর বিরুদ্ধে আসামিদের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়ে আপসচেষ্টার বিষয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এমন মামলার আপসরফার সুযোগ নেই।