কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

কয়রার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ২০০ মিটার অংশ ধসে গেছে। সোমবার সকালে কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামে পাউবোর বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ সোমবার ভোরে কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ২০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়ে।

বেড়িবাঁধ ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমনের খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদের লোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা বেড়িবাঁধে হঠাৎ ফাটল ও ধস দেখেন। সহায়-সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কায় এলাকার কিছু মানুষ ওই রাতেই বাঁধ রক্ষায় কাজ শুরু করেন। তবে আজ ভোরে ভাঙনরোধে পাউবোর দেওয়া পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খণ্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ মুহূর্তেই নদে বিলীন হয়ে যায়।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা দুঃখীরাম মণ্ডল বলেন, গত রাত থেকেই মাটি-বালুভর্তি বস্তা ধসে যাওয়া জায়গায় ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তবে সকাল হতেই ভাঙনের পরিধি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

আজ সকালে বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের যে স্থান ভেঙে গেছে, এর দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে বালু বেরিয়ে গেছে। ওই বালু ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। ধসে যাওয়া স্থানে সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন; আবার কেউ বাঁধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধের স্থানে দিচ্ছেন।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা ও আসলাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দুই বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাঁধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে গেছে।

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে গিয়েছিল। সে সময় পাউবো ওই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি মেরামত করে। এ কারণে দুই বছর না যেতেই বাঁধটি ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, আজ সকাল থেকে ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘূর্ণমান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য নদের তীরে পাকা ব্লক দেওয়া দরকার।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাঙনকবলিত স্থানে গিয়েছিলাম, বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারলেও ভাঙনরোধে দ্রুত পাউবোকে পদক্ষেপ নিতে হবে; অন্যথায় নদের তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কয়রার এসব বেড়িবাঁধ এত দিন সাতক্ষীরা জেলার আওতাধীন ছিল। দুই বছর আগে ২ নম্বর কয়রা এলাকার বেড়িবাঁধটি জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরা পাউবো নির্মাণ করেছিল। আমরা খুলনা পাউবো সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছি। তবে প্রশাসনিক জটিলতা এখনো কাটেনি। আমি আজ ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।’