সন্দ্বীপের সবুজ চরে চলছে ধান কাটার ধুম
সন্দ্বীপের সবুজ চরে চলছে ধান কাটার ধুম

সন্দ্বীপ

সরকার ধান কিনছে ৩৩ টাকায়, সবুজ চরের চাষিরা বিক্রি করছেন ২০ টাকায়

পাকা ধান কাটার শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ধানভান্ডার সবুজ চর। চরের চাষি এবং সন্দ্বীপের বাইরে থেকে আসা শত শত শ্রমিক ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁচি চালাচ্ছেন আমন ধানে। তবে লাভ-ক্ষতির হিসাবে নতুন ধানের আনন্দ মিলিয়ে যায় দ্রুতই। সন্দ্বীপ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চালকল না থাকায় সন্দ্বীপের কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না সরকারের। ফলে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন সন্দ্বীপের কৃষকেরা। কৃষকদের দাবি, সরকার তাঁদের থেকে ধান কিনলে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে তাঁরা ধান দেবেন সরকারকে।

চলতি বছর কেজি ৩৩ টাকা করে ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে সন্দ্বীপের সবুজ চরের চাষিরা স্থানীয় কারবারিদের কাছে বিক্রি করে প্রতি কেজি ধানের দর পান সর্বোচ্চ ২০ টাকা। সবুজ চরের চাষি নিজাম উদ্দিন (৫৮) জানান, তাঁর ৩০ কানি জমি থেকে প্রাপ্ত ৪৫ টন ধান বিক্রি করে তিনি পাবেন ৯ লাখ টাকা। সরকারি মূল্যে তিনি পেতেন ১৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। তিনি ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা কম পেলেও তাঁর ধান দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় চালকল হয়ে সরকারের কাছে ঠিকই পৌঁছে যাবে।

এ অবস্থায় নিজাম উদ্দিনসহ সবুজ চরের চাষিদের চাওয়া, সরকার তাঁদের কাছ থেকে ধান কিনলে তাঁরা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দরে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করবেন। নিজাম বলেন, ‘আমরা সরকারকে ৩৩ টাকার কমে ধান দেব। প্রয়োজনে ২৮ টাকায় দেব। তারপরও আমাদের খরচটুকু যাতে আমরা তুলে আনতে পারি।’

দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মো. দুলাল (৫৬) ১৫ কানি জমিতে আমন চাষ করে ২২ টন ধান পাওয়ার আশা করছেন। স্থানীয় বাজারে তিনি এই ধান বিক্রি করে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো পাবেন। দুলাল জানান, এই বছরের চাষে তাঁর সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি খরচই হয়েছে। সরকার ধান কিনে নিলে তাঁরা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ন্যায্যমূল্য পেতেন। কৃষককে এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে লাভের মুখ দেখাতে হলে সরকারিভাবে ধান কেনার উদ্যোগের বিকল্প নেই।

সন্দ্বীপ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাইফুল ইসলাম বলেন, সন্দ্বীপে চালকল না থাকায় ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ বছর তাঁদের দুই হাজার টন চাল এবং পাঁচ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে। কিন্তু চালকল না থাকায় ধান কিনে চাল করতে হলে নিতে হবে চট্টগ্রামে। সেই চাল আবার সন্দ্বীপে নিয়ে আসতে খরচ পড়বে অনেক বেশি। ফলে সন্দ্বীপের কৃষকের কাছে থেকে ধান, চাল কেনা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, একটি চালকল স্থাপনের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আন্তরিকভাবে দেখবেন তিনি। প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেছেন, চালকল না থাকলেও তাঁরা সন্দ্বীপের কৃষক থেকে ধান কিনবেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ধান কেনা শুরু হলে এবার আমরা সন্দ্বীপের কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনব।’