কুমিল্লা নগরে সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক কলেজছাত্রকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, হামলাকারীরা সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাঁদের ধরতে মাঠে নেমেছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁসারিপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে আটটার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আহত কলেজছাত্রকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, পাশের মৌলভীপাড়া এলাকার জুম্মন আহমেদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। জুম্মন স্থানীয় যুবদল কর্মী। তিনি এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, পাশের কাটাবিল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়াভাবে মাদকের কারবার চলছে। মাদক কারবারিরা কাঁসারিপট্টি এলাকাটিকে মাদক আনা-নেওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কাঁসারিপট্টি এলাকার লোকজন মাদক কারবারিদের বাধা দেন। এতে মাদক কারবারিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অন্তত ৩০ জনের একটি দল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্র নিয়ে কাঁসারিপট্টি এলাকায় হামলা চালায়। তারা ওই এলাকার অন্তত ২০টি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালাসহ মালামাল ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ওই মাদক কারবারিরা কাঁসারিপট্টি এলাকার বাসিন্দা কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক আজকের কুমিল্লার সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং তাঁর ছোট ভাই সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি ইশতিয়াক আহমেদের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, হামলাকারীরা সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে হয়েছে।
ঘটনার সময় স্থানীয় বাসিন্দা তোফায়েল আহমেদের ছেলে একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহাত হোসেন ঘর থেকে বেরিয়ে আসামাত্রই তাঁকে হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। তাঁর মাথা, চোখ, দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের অপরাধ সে মাদকের বিরুদ্ধে ছিল। এ জন্য মাদক কারবারিরা আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে রাহাতকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে। তার একটি চোখেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।’ তিনি জানান, ঘটনার পরপরই তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসক রাহাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তিনি এই হামলার বিচার চান।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, হামলার নেতৃত্বে থাকা যুবদল কর্মী জুম্মন ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়াভাবে মাদকের কারবার শুরু করেন। এর আগে তিনি গোপনে মাদকের ব্যবসা করতেন। জুম্মন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা ওরফে টিপুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার পর থেকে যুবদল কর্মী জুম্মন আহমেদের মোবাইল বন্ধ রয়েছে। তিনি হামলার পর গা ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা বলেন, ‘জুম্মন যুবদল কর্মী, এটা সত্য। আমাদের বিভিন্ন মিটিং–মিছিলে আসে। তবে সে আমার অনুসারী না। সে যদি অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান করছে। হামলাকারীরা মাদক কারবারি বলে জানতে পেরেছি। তাঁদের ধরার চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।