গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের নামা বড়নল গ্রামে ধরা পড়েছে মার্বেল গোবি মাছ। আজ রোববার দুপুরে মাছটি ওই গ্রামের আলমগীর হোসেন নামের এক মৎস্যচাষির ঘেরে ধরা পড়ে। দেশে এ ধরনের মাছ ধরা পড়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা বলে দাবি মৎস্য বিশেষজ্ঞদের।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল একই ইউনিয়নের গোলাঘাট গ্রামের আবু তালেব নামের অপর এক মৎস্যচাষির ঘেরে এই মাছ প্রথমবার ধরা পড়ে। তখন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা একে মার্বেল গোবি মাছ হিসেবে শনাক্ত করেন। ধরা পড়ার পরদিন ওই মাছটি মারা যায়। গবেষণার জন্য জেলা মৎস্য কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় মৃত মাছটিকে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষা করে এটিকে মার্বেল গোবি মাছ হিসেবেই নিশ্চিত করেন গবেষকেরা। তবে তখন এই মাছের আদ্যোপান্ত জানা যায়নি।
ছবি দেখে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগের প্রধান মীর মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এই মাছটি এই নিয়ে দেশে দ্বিতীয়বার ধরা পড়েছে। ঘটনাটি অস্বাভাবিক। তাই মাছটি নিয়ে অবশ্যই গবেষণা করা দরকার। এর খাদ্যাভ্যাস, এটি কীভাবে এল, এটির শরীরে গঠন নিয়ে গবেষণা দরকার। এই মাছটি শ্রীপুরেই কেন পাওয়া যাচ্ছে, সেখানকার পরিবেশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
মার্বেল গোবি মাছ ধরা পড়ার খবরে ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। মৎস্যচাষি আলমগীর তাঁর বাড়ির সামনে একটি অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে মাছটিকে জিইয়ে রেখেছেন। আশপাশের লোকজন সেখানে গিয়ে মাছের ছবি তুলছেন। অনেকেই পানিতে হাত ডুবিয়ে মাছটি স্পর্শ করে দেখছেন।
মার্বেল গোবি মাছের পিঠজুড়ে ধূসর রং, বিশাল আকারের মুখ। পিঠ ছাড়া শরীরের রং দেখতে কিছুটা কালচে। ডোরাকাটা সাপের মতো গায়ে ছোপ ছোপ দাগ। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত গায়ের রং একইভাবে বিস্তৃত। বুকের পাশে রং কিছুটা সাদাটে। চোখের পেছনেই একজোড়া ছোট আকৃতির পাখনা। মুখের ভেতরে ওপরে ও নিচে ধারালো ছোট ছোট দাঁত। মাছটির শরীর খুবই নরম। হাতে নিলে খুবই শান্ত থাকে। পানিতেও এই মাছের স্বভাব একদমই শান্ত।
মৎস্যচাষি আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ দিন আগে তিনি তাঁর মাছের ঘেরে এটিকে দেখেছিলেন। এর শারীরিক গঠনের বর্ণনা জানিয়ে তিনি অপর মৎস্যচাষি আবু তালেবের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে গত শনিবার থেকে মাছের ঘেরের পানি শুকানোর কাজ শুরু করেন। আজ দুপুরে পানি কমে এলে বিচিত্র মাছটি নড়ে ওঠে। মাছটি তোলার পর দেখা যায় এটি দেখতে হুবহু এপ্রিল মাসে ধরা পড়া মাছের মতোই। আলমগীর হোসেন বলেন, মাছটি গবেষণার জন্য সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিতে চাইলে তিনি তা দিয়ে দেবেন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্বেল গোবি মাছ মূলত পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। খেতে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় ওই অঞ্চলে মাছটি বেশ জনপ্রিয় ও দামি। বাংলাদেশের বেলে মাছের জাতের একটি প্রজাতি এটি। তবে ওই জাতের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় আকৃতির হয়ে থাকে।
মাছটির ছবি দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ডিন এস এম রফিকুজ্জামান বলেন, ‘মাছটিকে অবশ্যই কনসিডারে নিয়ে আসা উচিত। এর আদ্যোপান্ত জানা উচিত।’ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাছটি যেভাবেই হোক, জীবিত রাখতে হবে। এটি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আমরা এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই।’
গাজীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খবরটি তাঁর জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে পাঠাবেন।