মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ এলাকা ছেয়ে গেছে কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণে

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের পাশে এ রকম কয়েক হাজার কাঁঠাল গাছ লাগানো হয়েছে। এসব এলাকা এখন ছেয়ে আছে পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণে। বুধবার সকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার চরহরিঘোষ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ এলাকা এখন ছেয়ে আছে পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণে। এসব জায়গায় আগে কাঁঠালের গাছ ছিল না। কিছু গাছ হলেও বর্ষা বা বন্যার পানিতে মরে যেত। ১৯৭৯ সালে বেড়িবাঁধ হওয়ার পর স্থানীয় লোকজন ওই বাঁধ ও বাঁধের ভেতরকার সেচখালের দুই পাশে লাগাতে থাকেন কাঁঠালের চারা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও ব্যক্তিগত জায়গায় বেড়ে ওঠে সারি সারি কাঁঠালগাছ।

১৯৯০ সালের পর থেকে অদ্যাবধি বাঁধটির ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ও বাঁধের ভেতরে সেচখালের দুই পাশে বেড়ে উঠেছে কয়েক হাজার কাঁঠালগাছ। প্রতিবারের মতো এবারও এসব গাছ ভরে উঠেছে কাঁঠালে। স্থানীয় লোকজন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব কাঁঠাল বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।

আজ বুধবার সকালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, উপজেলার ফতেপুর, ঠেটালিয়া, সিপাইকান্দি, চরহরিঘোষ, সুজাতপুর, এনায়েতনগর, সানাতেরকান্দি, গজরা, আমুয়াকান্দা, গাজীপুর, ফরাজীকান্দি, এখলাশপুর, মোহনপুর, ছেংগারচর, দুর্গাপুর, কালিপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ওই বাঁধের দুই পাশে এবং বাঁধের ভেতরে সেচখালের দুই পাশে সারি সারি কাঁঠালগাছ। পাকা কাঁঠালের ম-ম ঘ্রাণে ছেয়ে আছে গোটা এলাকা। স্থানীয় লোকজন গাছ থেকে পাকা ও আধা পাকা কাঁঠাল সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য হাটবাজারে নিচ্ছেন। বেড়িবাঁধটির গোটা ৬০ কিলোমিটার এলাকাই এখন কাঁঠালময়।

স্থানীয় লোকজন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব কাঁঠাল বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলার চরহরিঘোষ এলাকার কৃষক মো. সালামত উল্লাহ বলেন, তাঁর বাড়ির কাছে বেড়িবাঁধের দুই পাশে অনেকগুলো কাঁঠালগাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছে ফলন হয়েছে। গত বছর তাঁর ১৫টি গাছে ৪ শতাধিক কাঁঠাল ধরে। এবারও এসব গাছে প্রায় ৫০০ কাঁঠাল ধরেছে। বেশ কিছু পাকা কাঁঠাল তুলে নিজেরা খেয়েছেন, স্বজনদের মধ্যে বিলিয়েছেন। কিছু কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করেছেন। কয়েক দিন পর বাকিগুলোও বিক্রি করবেন। এখন প্রতিটি মাঝারি আকারের কাঁঠাল ১০০ থেকে ২০০ টাকায়, বড় আকারের কাঁঠাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় এবং ছোট আকারের কাঁঠাল ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার এখন পর্যন্ত কাঁঠাল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা।

উপজেলার ফতেপুর এলাকার কৃষক মো. ওয়াদুদ প্রধান বলেন, সেচখালের পাশে পৈতৃক জায়গায় তাঁর ১০টি কাঁঠালগাছ। সেগুলোয় প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। অধিকাংশই পেকেছে। নিজেরা কিছু খেয়েছেন, স্বজন ও বন্ধুদের দিয়েছেন কিছু। কিছু বাজারে বিক্রি করেছেন। তাঁর গাছের কাঁঠাল খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। ২০ বছর ধরে কাঁঠালের ফলন পাচ্ছেন। বেড়িবাঁধ হওয়ায় কাঁঠাল এখন কৃষকের আশীর্বাদ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁর উপজেলায় বেড়িবাঁধ হওয়ার পর থেকে প্রচুর কাঁঠালের ফলন হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেক কৃষক সংসারের অভাব মেটাচ্ছেন। তাঁর উপজেলায় এ যেন ‘কাঁঠাল বিপ্লব’। আর্থিক লাভ দেখে অন্য কৃষকেরাও কাঁঠালের চারা রোপণে বেশি বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন।