বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়ায় গোলাগুলিতে নিহত আটজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পাড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন বম জনগোষ্ঠীর লোকজন। আজ শনিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে বান্দরবান সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়ায় গোলাগুলিতে নিহত আটজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পাড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন বম জনগোষ্ঠীর লোকজন। আজ শনিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে বান্দরবান সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে

বান্দরবানে গোলাগুলিতে নিহতদের ৮ জনই বম জনগোষ্ঠীর, পাড়ায় আতঙ্ক

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুই সংগঠনের গোলাগুলিতে নিহত আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই বম জনগোষ্ঠীর। তাঁদের মধ্যে ছয়জন রুমা উপজেলার জুরভারংপাড়া, একজন রৌনিনপাড়ার ও একজন রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইংখিয়াংপাড়ার বাসিন্দা।

প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের (বিএসসি) সভাপতি লালজার লম বম। তিনি হাসপাতাল থেকে লাশগুলো গ্রহণ করে জুরভারংপাড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন।

রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে খামতাংপাড়া থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেখানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ–গণতান্ত্রিক) মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও শুক্রবার সকালে গোলাগুলি হয় বলে জানান রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান।

পুলিশের নথিপত্রে উদ্ধারকৃত আটজনের লাশ অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করা হয়েছে। বিএসসি সভাপতি লালজার লম বমের তালিকা অনুযায়ী জুরভারংপাড়ার নিহত ছয়জন হচ্ছেন লাল ঠাজার বম, সাংখুম বম, ভানলাল দু বম, সান থির থাং বম, বল রেম বম ও লাললিয়ান বম। এর মধ্যে লাল ঠাজার বম জুরভারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। পাইংখিয়াংপাড়ার নিহত একজন হচ্ছেন জিহিম বম। আরেকজনের রৌনিনপাড়ার বমরাম থাং।

বম জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের অনেকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে লাশগুলো দেখার জন্য এসেছেন

বম জনগোষ্ঠীর নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিরা বম জনগোষ্ঠীর হওয়ায় বমপাড়াগুলোয় আতঙ্ক বিরাজ করছে। জুরভারংপাড়া, পাইংখিয়াংপাড়া, দুর্নিবার, রামথারপাড়াসহ খামতাংপাড়ার আশপাশের পাড়াগুলোর বমরা অনেকে পালিয়ে আছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে জেলা ও উপজেলা সদরের আশপাশের পাড়াগুলোয় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নেইতন বম প্রথম আলোকে বলেন, আতঙ্কে পালিয়ে থাকা লোকজনকে উপজেলা সদরে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তাঁদের অনেকে খাবারদাবারের সংকটে পড়েছেন।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বম জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের অনেকে লাশগুলো দেখার জন্য এসেছেন। লাশ দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে একই পাড়ার ছয়জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

ওসি আবদুল মান্নান বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশগুলো বম সোশ্যাল কাউন্সিলকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা লাশ নিয়ে যাচ্ছেন।

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম প্রথম আলোকে বলেন, জুরভারংপাড়ায় ছয়জনের লাশ একই স্থানে ও পাইংখিয়াংপাড়ায় একজনের লাশ আলাদাভাবে সমাধিস্থ করা হবে। রৌনিনপাড়ার নিহত ব্যক্তির লাশ তাঁর পাড়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।