সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় মাছের ঘেরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে কামরুল ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যক্তি পিটুনিতে নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার খলিষাখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিযান চালিয়ে ছোট-বড় ৫৪টি হ্যান্ড গ্রেনেডসহ ছয়জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
নিহত কামরুল ইসলাম দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালী এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত বক্কর গাজীর ছেলে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কামরুল ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।
আটক ছয়জন হলেন জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের মো. নুরুজ্জামান ও মেহেরাব, কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিবাটি গ্রামের হাসিবুল হাসান ও বড়াবট গ্রামের রবিউল আওয়াল, আশাশুনি উপজেলার শ্রীগঞ্জ এলাকার মো. সোহেল ও দেবহাটা উপজেলার কামটেটি গ্রামের হোসেন ফকির। তাঁদের ডাকাতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেবহাটার খলিষাখালী এলাকায় মাছের ঘের ও বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকজন ‘ভূমিহীন’ ব্যক্তি পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। খলিষাখালী এলাকার ওই জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ভূমিহীনদের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেখানে বসবাসরত ব্যক্তিদের দাবি, ওই জমি সরকারি খাসজমি। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, জমিগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন। ভূমিহীন দাবি করা ব্যক্তিরা জোর করে দখল করে আছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাতক্ষীরা সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে খলিষাখালীর ওই মাছের ঘেরে অস্ত্র ও ডাকাতির খবর পেয়ে অভিযানে যান সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তখন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘেরের মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পাইপগান দিয়ে গুলি চালান বলে দাবি সেনাবাহিনীর। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে কামরুলকে আটক করে পিটুনি দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ছোট-বড় ৫৪টি হ্যান্ড গ্রেনেড, গানপাউডার, রামদাসহ ছয়জনকে আটক করে সেনাবাহিনী।
দেবহাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মারুফ হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কামরুল ইসলামকে সকালের দিকে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গিয়েছিলেন।
খলিষাখালী এলাকার বাসিন্দা নিহত কামরুলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন বলেন, খলিষাখালীর ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে তাঁরা কয়েক শ ভূমিহীন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। ওই জমি স্থানীয় কয়েকজন নিজেদের বলে দাবি করে আসছিলেন। গত পাঁচ–ছয় মাসে কয়েকবার জমির মালিক দাবিদার ও ভূমিহীনদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দখলের ঘটনা ঘটেছে। তিনি অভিযোগ করেন, আজ সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের লোকজন তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।
তবে নলতা ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কোনো লোক ঘটনাস্থলেই যাননি। তিনি লোকমুখে পিটুনিতে একজনের মারা যাওয়ার কথা শুনেছেন।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মাদ বলেন, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে খলিষাখালীতে ঘেরসহ জমি দখল নিয়ে মহড়া দিচ্ছিল একটি গোষ্ঠী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে এখন সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আজ ভোরে খলিষাখালীতে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিটুনিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহত একজনকে হাসপাতালে পাঠানোর পর তাঁকে মৃত পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সেনাক্যাম্প থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন ছয়জনকে আটক করতে পারলেও অন্যরা পালিয়ে যান। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুঠোফোনে দেবহাটা থানার ওসি নূর মোহাম্মাদ বলেন, খলিষাখালীর ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। সেনাবাহিনী ছয়জনকে অস্ত্রশস্ত্রসহ আটক করলেও তাঁদের এখনো থানায় দেওয়া হয়নি। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ছয়জনকে আটকের বিষয়টি জানানো হয়েছে।