১ অক্টোবর থেকে সরকার সারা দেশে সুপার মলগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
নেত্রকোনায় নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। বরং বাজারে পলিথিন আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জেলা শহর ধরে ১০টি উপজেলার ছোট-বড় বাজারে এখন দেদার বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিন। অথচ গত ১ অক্টোবর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সারা দেশে সুপার মলগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
গত কয়েক দিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের জয়ের বাজার, আখড়া বাজার, মাছবাজার, রেলক্রসিংয়ের বাজার, কলমাকান্দা উপজেলা সদরের মধ্যবাজার, মাছবাজার, পাগলা বাজার, নাজিরপুর বাজার, দুর্গাপুরের কাঁচাবাজার, কুমুদগঞ্জ বাজার, পূর্বধলার জামতলা বাজার, রেলস্টেশন বাজার, মোহনগঞ্জের মধ্যবাজার, স্টেশন রোড বাজারসহ প্রতিটি বাজারেই পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে বাজারে কাগজের ঠোঙা (খাম), চটের ব্যাগ, নেট ব্যাগ, ঝুড়ি ইত্যাদি থাকলেও এসব ব্যবহারে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পলিথিনে পণ্য ভরে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া কয়েকজন দোকানির দাবি, পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ থাকলেও একটু দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ কম। ক্রেতারাই কোনো কিছু কিনে পলিথিনে ভরে নিতে চান। না দিলে তাঁরা দোকান থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী হন না। তাই ক্রেতাদের সুবিধার জন্য লুকিয়ে পলিথিন কিনে দোকানে রাখতে হয়।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘পলিথিনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হয়তো লুকিয়ে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গ্রামের বাজারগুলোতেও অভিযান অব্যাহত রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেওয়া আছে।’
এর আগে ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরও এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পলিথিনের সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহ বিভাগের তখনকার কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বিভাগকে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করেন। এতে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি ও আশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাঁর বদলির পর পলিথিনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় আবারও এর ব্যবহার বেড়ে যায়।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর প্রকাশ্যেই বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। মাছের বাজার থেকে শুরু করে মাংস, ডিম, তরকারি, পান-সুপারি, ফল, মিষ্টি ও মনোহারি প্রতিটি দোকানিই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছেন। এখন পলিথিন ব্যাগের দামও বেড়েছে। আগে যে পলিথিন ব্যাগের কেজি ৩৫০ টাকা ছিল, এখন তা বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে।
নেত্রকোনা শহরের মাছবাজারের কয়েকজন সবজি ও মাছ বিক্রেতা জানান, বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে গোপনে নির্দিষ্ট লোকদের কাছে পাইকারি পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করা হয়। আগে দাম একটু কম ছিল। এখন এক মাস ধরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় পলিথিন ব্যাগ এখন প্রতিটি দুই টাকা দাম পড়ে।
নেত্রকোনায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান বলেন, বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেই পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যবহারে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে শহরে ময়লা–আবর্জনা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে আছে। মগরা নদীটিও পলিথিনে ছেয়ে আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
নেত্রকোনা শহরের জাহানারা স্কুল রোড এলাকার বাসিন্দা কৃষিবিদ আলতাবুর রহমান বলেন, ‘পলিথিন সহজে পচে না। এটি পলিইথাইনিল নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি পানিরোধক বলে জমিতে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এটি মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।’
শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, এই সরকারও পলিথিন বন্ধ করতে পারছে না। বাজার থেকে কোনো কিছু কেনার পর দোকানদার তা পলিথিন ব্যাগে ভরে দেন। তাই নিরুপায় হয়ে বাসায় নিয়ে আসতে হয়।