বিকল্প সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। পাশেই নির্মাণধীন সেতুটির মেয়াদ শেষেও কাজ অর্ধেক শেষ হয়নি। গতকাল সকালে সাতক্ষীরা সদরের রইচপুর এলাকায়
বিকল্প সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। পাশেই নির্মাণধীন সেতুটির মেয়াদ শেষেও কাজ অর্ধেক শেষ হয়নি। গতকাল সকালে সাতক্ষীরা সদরের রইচপুর এলাকায়

সাতক্ষীরায় সেতু নির্মাণ

মেয়াদ শেষে কাজ মাত্র ৩০ ভাগ

এক বছর চার মাস আগে সেতুর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

সাতক্ষীরা-ঘোনা সড়কের একটি সেতুর পুনর্নির্মাণকাজ ঢিমেতালে চলায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাতক্ষীরা সদরের রইচপুর খালের ওপর পুরোনো সেতু জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সেটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতুর দরপত্র দেওয়া হয় ২ বছর ৯ মাস আগে। এক বছর চার মাস আগে সেতুর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। কবে এই সেতুর নির্মাণ শেষ হবে, তা নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই স্থানীয় লোকজনের। তাঁরা যাতায়াতে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

সেতুটি নির্মাণ করছে সাতক্ষীরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। সাতক্ষীরা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা-ঘোনা সড়কের রইচপুর খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

৬০ মিটার সেতুটির জন্য ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সল্যুশন ডিজাইন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালে ২৭ নভেম্বর। কার্যাদেশ অনুযায়ী, কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর।

সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সল্যুশন ডিজাইনকে ১৮ মার্চ সবশেষ চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে। কাজটি অনেক দিন বন্ধ থাকার পর গত দুই সপ্তাহ আগে আবার শুরু হয়েছে।

সরেজমিন গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুরে দেখা যায়, সেতুর চারটি পিলার ছাড়া দৃশ্যত আর কিছুই হয়নি। কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। পাশেই চলাচলের জন্য কাঠের পাটাতন দিয়ে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সেতু দিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাতায়াত করছেন ঝুঁকি নিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা-ঘোনা সড়কের রইচপুর সেতু দিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার একাংশ, শিবপুর, ঘোনা, আলীপুর ও আগড়দাঁড়ি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে আসছিল। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় পুরোনো সেতুটি ভেঙে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি শুরু করা হয় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ। কিন্তু তারপর দুই বছর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেতুর চার ভাগের এক ভাগ কাজ মাত্র শেষ হয়েছে।

শিবপুর ইউনিয়নের আদুলপোতা গ্রামের কৃষক লক্ষ্মণ মণ্ডল, খানপুর গ্রামের রুহুল কুদ্দুস ও মো. হাবিবুল্লাহ জানান, চলাচলের জন্য বিকল্প হিসেবে যেনতেনভাবে কাঠের পাটাতন দিয়ে একটি সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সেতু দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন যাতায়াত করতে পারে না। ওই সেতুর ওপর দিয়ে পিকআপ ও ট্রাকে মালামাল বহন করা যায় না। ফলে মালামাল বহন করতে উপজেলার আলীপুর, নয়তো আবাদের হাট দিয়ে ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। শুধু তা–ই নয়, সেতুর ওপর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যাতায়াত করতে না পারায় তাঁদের গ্রামের মানুষসহ শতাধিক গ্রামের মানুষ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের শেষ সীমানায় রইচপুর। সেতুর নির্মাণকাজ তিন বছর আগে শুরু করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী, শেষ করার কথা ছিল দেড় বছর আগে, কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বিষয়টি তিনি সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে একাধিকবার মুঠোফোনে ও সরাসরি বলেছেন। এমনকি সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কিন্তু তারপরও কোনো ফল হচ্ছে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সল্যুশন ডিজাইনের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে গতকাল একাধিকবার কল করলেও তিনি কল ধরেননি। এ কাজের প্রধান মিস্ত্রি দীপংকর কুমার মণ্ডল জানান, তাঁরা নতুন করে কাজ শুরু করেছেন। আশা করছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ করছিলেন না। সবশেষ গত জানুয়ারিতে ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। ইতিমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।