সুনামগঞ্জে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করে পুলিশকে মারধর করে পালানো ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মো. সাহেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ছাতক থানার পরিদর্শক আবদুস সালাম বাদী হয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সাহেল পলাতক।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউপির চেয়ারম্যান সাহেলকে ধরতে তাঁর কার্যালয়ে যায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক লাইভে গিয়ে তিনি এলাকাবাসীকে জড়ো করেন। পরে পুলিশকে মারধর করে একটি মোটরসাইকেলে কার্যালয় ছেড়ে চলে যান তিনি। এ ঘটনায় সাহেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় পুলিশকে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিনকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
শাহাব উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি ছাতক পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরীর ভাগনে। ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন।
মঙ্গলবার শাহাব উদ্দিনের ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, একদল পুলিশ সদস্য তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে তাঁকে বের হওয়ার অনুরোধ করছেন। কিন্তু শাহাব উদ্দিন চেয়ারে বসে তাঁকে গ্রেপ্তারের পক্ষে কোনো কাগজপত্র আছে কি না, পুলিশকে দেখাতে বলছেন। পুলিশের অনুরোধে কাজ হচ্ছে না। তাঁর সঙ্গে সেখানে থাকা অন্য লোকজনও পুলিশকে কাগজপত্র বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। একপর্যায়ে তিনি সেখানে থাকা লোকজনকে এলাকার মসজিদের মাইকে তাঁকে ধরে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি জানিয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য বলেন। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকা কিছু লোককে পুলিশের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায়। প্রায় ২০ মিনিট এভাবে পুলিশের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়।
লাইভের শেষ দিকে শাহাব উদ্দিন পাশে থাকা লোকজনকে বাইরে একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি শোনা যায়। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের যাতে কেউ মারধর না করেন, এটিও বলেন একজন। এরপর সাহাব উদ্দিন বলেন, তিনি যেখানেই থাকেন না কেন ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে বলে এলাকাবাসীকে লাইভে আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, লোকজন বেশি জড়ো হওয়ায় পুলিশ একসময় অসহায় হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর কক্ষ থেকে বের হয়ে পুলিশের সামনেই ওই মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যান। লোকজন বেশি হওয়ায় পুলিশ তখন তাঁকে আর ধরার চেষ্টা করেনি।