অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় প্রকৌশলীকে মারধর করে মাথা ন্যাড়া

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র
নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) এক প্রকৌশলীকে মারধর ও তাঁর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনসহ স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে দুই দফায় ওই প্রকৌশলীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
হামলার শিকার ওই প্রকৌশলীর নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। কোম্পনীগঞ্জ বিউবোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় সংস্থাটির ফেনী কার্যালয় থেকে। হামলার ঘটনার পর ফেনী বিউবোর লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সেখানে (ফেনী) নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর ওই প্রকৌশলী লজ্জায় হাসপাতালেও ভর্তি হননি। তিনি সেখান থেকে কুমিল্লায় নিজ বাসায় চলে যান। বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রকৌশলীকে চড়থাপ্পড় মারার কথা এবং তাঁর উপস্থিতিতেই মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সেতুমন্ত্রীর ছোটভাই শাহদাত হোসেন। তাঁর অভিযোগ, দুটি খুঁটি স্থাপনে ওই প্রকৌশলী এক লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। পরে লোকজন ধরে থাপ্পড় দিয়েছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শাহদাত হোসেন বলেন, ওই প্রকৌশলী কোম্পানীগঞ্জে লুটতরাজ করছেন। মানুষের মিটার বন্ধ করে দিয়ে তিন হাজার টাকা করে আদায় করেন।
হামলার শিকার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে বাপেক্সের একটি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য ফেনী থেকে বিউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোম্পানীগঞ্জে আসেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা তাঁদের নির্ধারিত কাজ না করে অন্য জায়গা থেকে দুটি পুরোনো খুঁটি নিয়ে এসে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি এলটি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ শুরু করেন। ওই লাইন নির্মাণের কোনো দাপ্তরিক অনুমোদন ছিল না। বিষয়টি জানার পর বিউবোর আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (একই নামের অপর ব্যক্তি) তাঁকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন এবং ঠিকাদারের লোকজনকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।

হামলার শিকার সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেল চারটার দিকে সেই লোকজন পুনরায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভানু মাঝির বাড়ির কাছে অনুমোদনহীন লাইন নির্মাণ করতে গেলে আবাসিক প্রকৌশলী তাঁকে আবারও সেখানে পাঠান। তিনি সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে বিষয়টি নিয়ে আবাসিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এ সময় লাইন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় যুবলীগের নেতা মো. খোকন ও শিপন শাহরিয়ারসহ দলীয় নেতা–কর্মীরা তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর শুরু করেন।
প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে ঘটনার বিচার করার কথা বলে শিপন ও খোকনসহ দলীয় লোকজন তাঁকে সেতুমন্ত্রীর বাড়ির সামনে তাঁর ছোট ভাই শাহদাতের কাছে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর মন্ত্রীর বাড়ির সামনের দোকানসংলগ্ন একটি ঘরের ভেতর আটকে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে মারধর করা হয়। তখন মন্ত্রীর ভাই শাহদাতও তাঁকে পেটান। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁর মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিচার কার কাছে চাইব? আমি তো আমার বিভাগীয় প্রধানকে বলেছি। আমি যে অসুস্থ, তিনি আমাকে ফোন পর্যন্ত করেননি। তিনি শুধু বলেছেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।’

অধীনস্থ প্রকৌশলী হামলার শিকার হওয়া ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফেনী বিউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম রেজাউন নবী বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা জানার পর তিনিই সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুককে পাঠিয়ে সাইফুল ইসলামকে উদ্ধার করে এনেছেন। এ ঘটনায় তিনি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি শিপন শাহরিয়ার দাবি করেন, তিনি প্রকৌশলীর ওপর হামলা করেননি। তবে খুঁটি স্থাপন করার সময় ওই প্রকৌশলী এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন। ওই সময় মন্ত্রীর ছোট ভাইয়ের কথা বলার পর তিনি তাঁর সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন। তখন ওই এলাকার নারীরা তাঁকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। তখন মন্ত্রীর ভাই তাঁকে রক্ষা করেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে এ ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি।