‘ঝালকাঠির মিষ্টি, অপূর্ব সৃষ্টি’—একসময় পালাগান বা জারিগানের আসরে শিল্পীদের মুখে এ কথা শোনা যেত। শত বছরের পুরোনো ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লার মান ধরে রেখেছেন এ সময়ের কারিগরেরাও। রসে ভেজানো জিবে জল আনা এই রসগোল্লা এখন সারা দেশেই সমাদৃত।
উৎসব, বিয়ে, পার্বণ কিংবা সুসংবাদে মিষ্টি পরিবেশন করা বাঙালির সংস্কৃতির অংশ। হরেক রকম মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লা যেন ভোজনরসিকদের কাছে একটু বেশিই প্রিয়!
ঝালকাঠির দেবনাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লার নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। এই দোকানের মালিক উত্তম দেবনাথ বলেন, একসময় হাটবাজারে নিজেদের তৈরি গামছা ও খামারের গরুর দুধ বিক্রি করতেন তিনি। তখন বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দুধ বিক্রি করতে গিয়ে কারিগরদের কাছ থেকে রসগোল্লাসহ বিভিন্ন মিষ্টি বানানো রপ্ত করেন। শহরের কামারপট্টিতে মিষ্টির দোকান দেন। তাঁর দোকানের রসগোল্লা, রসমালাই এখানকার মানুষের কাছে বিশেষ প্রিয়। প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ মণ রসগোল্লাই বিক্রি করেন তিনি।
শহরের সাধনার মোড়ের নগেন ঘোষের রসগোল্লা, বড় বাজারের গোপাল ঘোষের রসগোল্লা, হোগলাপট্টির নরেন কুড়ির রসগোল্লা, সদর চৌমাথার মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লাও স্বাদে অতুলনীয়।
রসগোল্লা বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে দেবনাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক উত্তম দেবনাথ বলেন, গরুর দুধ, ময়দা ও চিনি দিয়ে তৈরি হয় মোলায়েম রসগোল্লা। মুখে দিতেই গলে যায় মিষ্টি। এ কারণে ঝালকাঠির রসগোল্লার চাহিদা সারা দেশে। ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম ওজনের একেকটি রসগোল্লা বিক্রি হয় ২৫ টাকায়।
বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকানের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে স্থানীয় গোয়লরা গরুর দুধ দিয়ে যান মিষ্টির দোকানগুলোয়। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই মণ কাঁচা দুধ কেনে একেকটি দোকান। পরে কাঠের চুলায় জ্বাল দিয়ে দুধ ঠান্ডা করা হয়। আগের রেখে দেওয়া ছানার পানির সহায়তায় ঠান্ডা হওয়া দুধের ছানা কাটা হয়। এরপর কাপড়ের মাধ্যমে দুধের পানি থেকে ছানা আলাদা করা হয়। পানি ঝরে গেলে ছানা কিছুটা ঝরঝরে হয়ে ওঠে। এরপর সেই ছানা দিয়ে বানানো গোল গোল মিষ্টি জাল দেওয়া হয় চিনির তৈরি শিরায়। এভাবেই তৈরি হয় নরম আর সুস্বাদু রসগোল্লা।
ঝালকাঠির রসগোল্লা রসে ভরা ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টি। একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়!শুভ ঘোষ, মিষ্টির দোকানের পরিচালক
ঝালকাঠি শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সামসুল হক বলেন, ‘আমাদের ঝালকাঠির রসগোল্লার সুনাম বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমি বিদেশে গেলে আত্মীয়স্বজনের জন্য ঝালকাঠির রসগোল্লা নিয়ে যাই।’
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ঝালকাঠির মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠি থেকে ফেরার সময় পরিবারের জন্য রসগোল্লা নিয়ে যাই। ঝালকাঠির রসগোল্লার স্বাদ এখনো আগের মতোই আছে।’
ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড়ের নগেন ঘোষের রসগোল্লা, বড় বাজারের গোপাল ঘোষের রসগোল্লা, হোগলাপট্টির নরেন কুড়ির রসগোল্লা, সদর চৌমাথার মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লাও স্বাদে অতুলনীয়।
ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড়ের শত বছরের পুরোনো নগেন ঘোষের মিষ্টির দোকান পরিচালনা করেন শুভ ঘোষ। তিনি বলেন, ঝালকাঠির রসগোল্লা রসে ভরা ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টি। একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়! এ অঞ্চলের ভোজনরসিকদের কাছে ঐতিহ্যের কারণে হোক বা স্বাদের কারণেই হোক; রসগোল্লা বেশি জনপ্রিয়।