সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ও আহমদ আল কবির
সিলেট-৫ আসনের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ও আহমদ আল কবির

সিলেট-৫ আসন

নৌকা নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হুছামুদ্দীনকে জেতাতে চায় আওয়ামী লীগ

সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে সব সময় ইসলামি দলগুলো ভোটের মাঠে বড় নিয়ামক হয়ে দেখা দেয়। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রায় সব কটি জাতীয় নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর নেতারা হয় সংসদ সদস্য নতুবা দ্বিতীয় হয়েছেন। এবারও ভোটের মাঠে একই চিত্র। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে একজন আলেমের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে।

ভোটাররা জানিয়েছেন, এ আসনে মোট প্রার্থী সাতজন। তবে লড়াই হবে ত্রিমুখী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেটলি) ও আহমদ আল কবিরের (ট্রাক) মধ্যেই মূলত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ইসলামি চিন্তাবিদ হুছামুদ্দীন আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি এবং কবির সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের ওবায়দুল হক এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ওবায়দুল্লাহ ফারুক দ্বিতীয় এবং সপ্তম ও নবম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দ্বিতীয় হন।

স্বাধীনতার পর সিলেট-৫ আসনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি, একবার করে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে বিগত সব কটি সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উল্লেখযোগ্য ভোট পান। ফলে এখানে ভোটের মাঠে বরাবরই ইসলামি দলগুলোর ‘নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক’ সব সময় আলোচনায় থাকে।

একাধিক ভোটার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। সৎ ও নির্লোভ ব্যক্তি হিসেবে স্থানীয়ভাবে তিনি সর্বজনমান্য। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ আল কবির। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তাঁর প্রয়াত বাবা আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত। আবদুল লতিফের তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ আছেন। ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে একটা ‘ভোটব্যাংক’ আছে।

এবার নির্বাচনে হুছামুদ্দীন চৌধুরী নিজেই প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তাঁকে ঘিরে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন। এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর সাক্ষাৎ আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বৈঠকের পর থেকে হুছামুদ্দীনের নির্বাচনী এলাকায় তাঁর অনুসারীরা বিষয়টিকে ‘শুভ ইঙ্গিত’ বলে প্রচার শুরু করেন।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলছেন, স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আহমদ আল কবিরের পক্ষে দুটি পক্ষ সক্রিয়। আরেকটি বৃহৎ অংশ ভেতরে-ভেতরে সক্রিয় আছে হুছামুদ্দীনকে নিয়ে। ওই পক্ষ নৌকাকে পাশ কাটিয়ে হুছামুদ্দীনকে জিতিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। এমনকি তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা হুছামুদ্দীনের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগেও অংশ নিচ্ছেন।
হুছামুদ্দীনকে সমর্থন দিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরে কেটলি প্রতীকের পক্ষে প্রচার মিছিল করেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ‘ওপর মহলের চাপে’ আওয়ামী লীগের ওই পক্ষ হুছামুদ্দীনের পক্ষে কাজ করছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। তবে ‘ওপর মহল’ কারা, তা তাঁরা খোলাসা করেননি।

যোগাযোগ করলে মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এলাকার সব মানুষ আমার পক্ষে। আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ। তবে তলেতলে দলের কিছু নেতা-কর্মী হুছামুদ্দীনের পক্ষে আছে। ওই ব্যক্তিরাই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিচ্ছে। তবে কাজ হবে না, নৌকার বিজয় হবেই।’

হুছামুদ্দীন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি সাড়া দেননি। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাইলে আওয়ামী লীগসহ সব দলই আমাকে মনোনয়ন দিত। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার কোনো কালেও ছিল না। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। দল–মতনির্বিশেষে সবাই আমাকে ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস করি।’

এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলম (ডাব) ও মুসলিম লীগের (বিএমএল) খায়রুল ইসলাম (হাত-পাঞ্জা)। এখানে ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৩২৫ জন।