ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ফুলপরীকে অধিকতর নিরাপত্তা দিতে কুষ্টিয়া ও পাবনার পুলিশ সুপারকে চিঠি

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় তাঁকে (ফুলপরীকে) অধিকতর নিরাপত্তা বিধান ও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাবনা ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান আজ বুধবার বিকেলে এই চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়ের মোবাইল বার্তার আদেশে এই চিঠি পাঠানো হয়।

পাবনা ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক দুটি চিঠি পাঠানো হয়। এর অনুলিপি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছেও আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এই চিঠিতে ফুলপরীকে যেকোনো ছাত্রী হলে তাঁর পছন্দমতো সিটে তুলে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর আগে দুপুরে হাইকোর্টের নির্দেশে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। আজ বুধবার এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর দ্রুত তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৪ মাস ধরে শামসুল আলম দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।

এ ছাড়া আজ দুপুরে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঘটনাটি নিয়ে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর আজ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন দেখে আজ হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন ও বিধিবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে ‘সাসপেন্ড’ করতে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যধারার প্রয়োজনে তাঁদের ডাকা যাবে।

সানজিদা চৌধুরী ছাড়া অপর চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান। এ ছাড়া হাইকোর্ট ওই ঘটনার সময় ফুলপরীর ভিডিও ধারণকারী শিক্ষার্থী হালিমার মুঠোফোন উদ্ধার এবং ধারণ করা ভিডিও সংরক্ষণ করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ফুলপরী খাতুন যাতে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য তিন দিনের মধ্যে তাঁর পছন্দ অনুসারে হলে তাঁকে আসন বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রভোস্ট, হাউস টিউটরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পেয়েছে। হল থেকে প্রভোস্টকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রভোস্টসহ তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।
আদালত আগামী ৮ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। সেদিন প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন।