রেলওয়ের জমি থেকে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান ও তাঁর স্বজনদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকা ও আশপাশের রেলওয়ের জমি থেকে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্বজনদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকা ও আশপাশের রেলওয়ের জমি থেকে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্বজনদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি বিভাগের সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। এ অভিযানের আওতায় সোমবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রেলওয়ের জমিতে থাকা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আনুমানিক ৫ শতক রেলওয়ে ভূসম্পত্তিতে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের টিনশেড আধা পাকা দলীয় কার্যালয়, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানের নামে অস্থায়ী কৃষি লাইসেন্সের আওতায় ৩৬ শতক জমিতে তাঁর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের সুইমিংপুল কাম পার্ক, নুরুজ্জামানের ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ওরফে ভুট্টুর নামে অস্থায়ী কৃষি লাইসেন্সের আওতায় রেলওয়ের ৭০ শতক ভূসম্পত্তিতে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন স্থাপনা ও নুরুজ্জামান আহমেদের প্রভাব খাঁটিয়ে বাণিজ্যিক লাইসেন্সের আওতায় আনুমানিক ১০ শতক জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত একটি তামাকের গুদাম।

এ অভিযানের আওতায় সোমবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রেলওয়ের জমিতে থাকা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সোমবার দুপুরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকায়

এর আগে ১৩ নভেম্বর রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি বিভাগের উপকমিশনার নাজিব কায়সার স্বাক্ষরিত উচ্ছেদের নোটিশ নুরুজ্জামান আহমেদকে পাঠানো হয়। ওই উচ্ছেদ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘যেহেতু আপনি অস্থায়ী কৃষি লাইসেন্স গ্রহণ করে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে রেলওয়ে ভূমিকে (৩৬ শতক) জলাশয় রূপান্তর করে পাকা দেয়াল দিয়ে ঘিরে বিভিন্ন স্থাপনা ও পার্ক নির্মাণ করেছেন এবং ওই রেল ভূমি ঘেরাও করে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের নানাবিধ ক্ষতিসাধন করেছেন, আপনার অস্থায়ী কৃষি লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। সরকারি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ভূমি ও ইমারত (দখল ও পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ, ১৯৭০-এর ধারা ৫ (১) মোতাবেক উচ্ছেদ নোটিশ জারি করা হলো।’

উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনকারী লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি বিভাগের সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকায় রেলওয়ে ভূসম্পত্তিতে অবৈধভাবে সুইমিংপুল কাম পার্ক নির্মাণ করেছিলেন। যেহেতু ওই রেলওয়ে ভূসম্পত্তি (৩৬ শতক) নুরুজ্জামান আহমেদের নামে অস্থায়ী কৃষি লাইসেন্স করা এবং লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে, সেহেতু উচ্ছেদ নোটিশটি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নামে জারি করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার এলাকায় রেলওয়ের জমিতে থাকা সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলের অবৈধ পার্ক উচ্ছেদ করা হয়। সোমবার দুপুরে

উচ্ছেদ অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আবদুর রাজ্জাক, লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশল দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম, লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কার্যালয়ের ফিল্ড কানুনগো শেখ মনজুরুল হকসহ রেলওয়ে ও কালীগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় উৎসুক জনতা উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম দেখে। কেউ কেউ মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে দেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘ক্ষমতার দাপট-৩: লালমনিরহাট, নিজ পরিবারের কল্যাণে যত নয়ছয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর’ শিরোনামে একটি সচিত্র বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। তাঁর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ একটি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনিও ৫ আগস্ট থেকে অজ্ঞাত স্থানে আছেন। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার নিহতের ঘটনায় রাকিবুজ্জামানের নামে একাধিক হত্যা মামলা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এর আগে ২০২২ সালে একবার রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার চেষ্টা করা হলেও তখন নুরুজ্জামান আহমেদের ক্ষমতার দাপটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী সরকারের পতন না হলে আর কখনোই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হতো না।