সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঝিনাইদহে মেছো বিড়াল হত্যা ও হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আজ শনিবার বিকেলে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বন্য প্রাণী হত্যার অভিযোগে কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন যশোর শার্শা ওয়াইল্ড লাইফ কন্ট্রোল ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের ইজিবাইকচালক জাহিদুল ইসলাম (৩৫) ও খড়াশুনি গ্রামের মোশারফ হোসেন (৬০)।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ১৯ ডিসেম্বর সকালে কালীগঞ্জ-নলডাঙ্গা সড়কের কাদিপুর এলাকায় পিটিয়ে মেছো বিড়ালটি মারা হয়। পরে ইজিবাইকচালক জাহিদুল ইসলাম তাঁর গাড়িতে করে মৃত বিড়ালটিকে বাজারে নিয়ে যান। ইজিবাইক স্ট্যান্ডে নেওয়ার পর উপস্থিত লোকজন মৃত প্রাণীটিকে একটি দোকানোর সামনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গলায় ফুলের মালা দেন। মেছো বিড়ালের মুখে সিগারেট ও সামনে চায়ের কাপ রেখে ছবি তোলেন। পরে তখনকার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে একটি কাগজে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা ছিল। এটা দেখে বন বিভাগের সব ইউনিটের কর্মকর্তারা শুক্রবার ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা সরেজমিন তদন্ত করে থানায় অভিযোগ দেন।
শনিবার নলডাঙ্গা বাজারে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার দিন চলন্ত যানবাহনে বাড়ি লেগে মেছো বিড়ালটি মারা যায়। সেটা মজা করার জন্য একজন চালক তাঁর গাড়িতে করে বাজারে নিয়ে আসেন। পরে অল্প বয়সী কয়েকজন প্রাণীটিকে সাজিয়ে ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
কাদিপুর জামে মসজিদের ইমাম নূর ইসলাম বলেন, তিনি ভোরে নামাজ পড়ানোর পর ফেরার পথে মেছো বিড়ালটিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর ধারণা, রাতের কোনো এক সময় চলন্ত যানবাহনে ধাক্কা খেয়ে বিড়ালটি মারা গেছে। এরপর সকালে ইজিবাইকচালকেরা সেটা বাজারে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের কালীগঞ্জের দায়িত্বে থাকা আইন সম্পাদক আদনান মীম জানান, তাঁরা ঘটনাটি তদন্ত করছেন। কীভাবে মেছো বিড়ালটি মারা গেল, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, সেটা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনার পর তাঁরা এলাকায় গিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন।
আঞ্চলিক বন সংরক্ষক জহির আকন বলেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরটি দেখে সেখানে কর্মকর্তাদের পাঠান। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করেছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি, তদন্ত) দায়িত্বে থাকা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগে তাঁরা দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।