লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চর কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া। বন্যায় তাঁর সব শেষ। বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন কলাকোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গতকাল বিকেলে
লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চর কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া। বন্যায় তাঁর সব শেষ। বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন কলাকোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গতকাল বিকেলে

লাঠিতে শরীরের ভার, মনে দুশ্চিন্তা

ইউনুছ মিয়ার বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। হাত-পা কাঁপে। হাঁটতে গিয়ে নুয়ে পড়েন। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। অল্প কিছু জমি আর ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে তাঁর সংসার। এ বয়সে এসে সেটাও হারানোর দশা। বন্যায় তাঁর ঘর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নষ্ট হয়ে যায় সব আসবাব। সব ঠিকঠাক করে আগের জীবনে ফিরতে পারবেন কি না, এখন কেবল এ দুশ্চিন্তাই তাড়া করে ফিরছে তাঁকে।

লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চর কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া। গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরে পূর্ব পাশে তাঁর ঘর। এখন তিনি পশ্চিম চর কলাকোপা হাজী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে এ কেন্দ্রের সামনেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

ইউনুছ মিয়া জানান, এবারের বন্যায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাঁর ঘরে এখনো হাঁটুসমান পানি। তিনিসহ গ্রামের ৩০টি পরিবারের প্রত্যেকেই ঘর ছেড়েছেন। তিনি বলেন, ১২ থেকে ১৫ দিন ধরে বাড়িতে পানি উঠেছে। ডুবে থাকার কারণে ঘরের বেড়াগুলোতে পচন শুরু হয়েছে। ঘরের অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। ঘরে চাল ছিল, সেগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। রোদ না থাকায় শুকাতে পারেননি। তাই পচে গেছে।

শুধু এই ইউনুছ মিয়াই নন, বন্যার কবলে পড়ে জেলার পাঁচটি উপজেলার অনেকে মেহনতি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। যতই দিন যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমছে। তবে ধীরগতিতে। বৃষ্টি না হলে দু-তিন দিনের মধ্যে পানি অনেক কমে যাবে। দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদী।

তিনি আরও জানান, ভুলুয়া ও রহমতখালী নদীসহ খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় খাল খনন ও দখলমুক্ত করা জরুরি।

স্মরণকালের এ বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ শতাংশ এলাকাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী ছিল। তবে তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, ভয়াবহ বন্যার কবলে ৫৮টি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ। বানের পানিতে সর্বহারা এসব মানুষের ভরসা এখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ। পানিতে সবগুলো সড়কে বুকসমান পানি। ফলে সেসব এলাকায় ত্রাণ–সহায়তা দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। ত্রাণ দেওয়ার জন্য কেউ গেলেই বুকসমান পানি ডিঙিয়ে সেখানে হুড়মুড়িয়ে ছোটেন নারী-পুরুষ সবাই।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বন্যার্তদের পাশে সর্বস্তরের মানুষ দাঁড়িয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণ বিতরণ করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছানো যাবে। এ জন্য তিনি ত্রাণ বিতরণ করতে আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।