জামালপুরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
জামালপুরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজ রোববার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিতে সেতু–মহাসড়ক

ভারী বর্ষণে জামালপুরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, সেতু, বসতবাড়িসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

এদিকে সাত দিন ধরে ভাঙন হলেও মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

আজ রোববার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ২০ মিটার ভেঙে ধসে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। সিসি ব্লকসহ বাঁধের মাটি সরে গেছে। ভাঙন সেতুর একদম পিলারের গোড়ায়। ভাঙনের স্থানের আশপাশে আরও ফাটল ধরেছে। ভাঙনের স্থানে স্থানীয় লোকজন বাঁশ দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। বাঁধের ওপর দিয়ে ওই স্থানে হেঁটে চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ভাঙনের কারণে শাকিল আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তির বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা আবু সাইদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বাঁধের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে ওই অংশে প্রথমে ছোট একটি গর্তের সৃষ্টি হয়। গত সপ্তাহে বাঁধটির বড় অংশ ধসে পড়ে। এখন বৃষ্টির পানিতে ধস বেড়েই যাচ্ছে। মূল নদের অংশে এমন ভাঙনের কারণে আমরা চিন্তিত। বৃষ্টির কারণে নদের পানিও বাড়ছে। এখন নদ পানিতে দ্রুত ভরে যাবে। তখন এই স্থান থেকে পুরো বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আবু সাইদ অভিযোগ করেন, সাত দিন ধরে বাঁধটির এমন বেহাল অবস্থা। তারপরও পাউবো মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

পাউবোর জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুর পৌরসভা ভবন, শতবর্ষী জিলা স্কুল, পৌর কমিউনিটি সেন্টার, এলজিইডি ভবন, সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের (এসপি) বাসভবন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জজকোর্ট, জেলা পরিষদ ভবন, সদর থানা, এসপির কার্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় ২০১৩ সালে শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ফেরিঘাট এলাকার ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে শহরের পাথালিয়া পর্যন্ত বাঁধের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এটি নির্মাণে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহম্মেদ বলেন, ‘বাঁধের নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বড় একটি পাইপ ছিল। ওই পাইপ দিয়ে মহাসড়কের পানি নদে নামত। অনেক আগেই ওই অংশে ছোট্ট গর্তের মতো সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা আর মেরামত করা হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এ সময় বাঁধের নিচের সিসি ব্লক ও মাটি সরে যায়। গত সপ্তাহে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পর থেকে একটু একটু করে ভাঙছে। পরে ওই পাইপের পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আরও ভাঙনের আশঙ্কা আছে। ভাঙন আমার বাড়ির একদম কাছে চলে এসেছে। দুই থেকে তিন ফুট দূরে আমার বাড়ি। এ ছাড়া ভাঙন থেকে মহাসড়কটির দূরত্ব একদম কম। ভাঙন অব্যাহত থাকলে মহাসড়কের দিকে ভাঙন চলে যাবে। দ্রুততম সময়ে মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’

ফেরিঘাট এলাকার আজগর আলী বলেন, অনেক টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটি সংস্কার বা দেখভালে পাউবোর কোনো লোকজনকে দেখা যায় না। যেখানে বাঁধটি ভেঙেছে, সেটি মূল নদ। সেতুর একদম পিলারের গোড়ায় ভাঙছে। বাঁধটির খুব কাছে ময়মনসিংহ-জামালপুর মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধটি মেরামত করা দরকার।

জামালপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাঙনের স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’