শীর্ষ নেতাদের নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার গুঞ্জনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা নতুন দলে যোগ দেওয়া বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবর উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, দেশের মানুষ আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যাবে না। গাড়ি পোড়ানোসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সরকারের পেটোয়া বাহিনীই করছে। বিএনপি দেশের মানুষের ভোটের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজশাহী শহরের মালোপাড়া এলাকায় মহানগর ও জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেই সেখানে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাধারণত বিএনপির সংবাদ সম্মেলন বা দলীয় কর্মসূচি থাকলে বিএনপি কার্যালয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকে। তবে এদিন কার্যালয়ের আশপাশে পোশাকধারী কোনো পুলিশ দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকারসহ ১০-১২ জন নেতা।
কয়েক দিন ধরে রাজশাহীতে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, মিজানুর রহমান, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, প্রয়াত বিএনপিদলীয় মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই স্থানীয় বিএনপির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বিএনএমের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেছেন। তিনি রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর পূর্বপুরুষেরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছেন। সেই রক্ত তাঁর শরীরে বইছে। তিনি বিএনপিতে আছেন। যত দিন বাঁচবেন, বিএনপিতেই থাকবেন। মতিউর রহমানের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাঁর ব্যাপার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে নাদিম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে তিনি বিএনপিতে এসেছেন। হাজার কোটি টাকা দিলেও তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিজানুর রহমান বলেন, বিএনপি বারবার এই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশের জনগণের যে সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য সবভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ সরকার তাতে কোনো কর্ণপাত না করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিএনপি মনে করে, জনগণ ক্ষমতার মূল উৎস। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছে তারা। তিনি বলেন, সরকার রাজশাহী জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতা ও কর্মীদের অকারণে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় জেলখানায় পাঠিয়েছে। তিনি গ্রেপ্তার সব নেতা-কর্মীর মুক্তি এবং সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে মিজানুর রহমান বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে আন্দোলনে রাজশাহী জেলা পুলিশ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা রহস্যজনক ও বিচিত্র। পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের বাহিনী। তারা কোনো দলের বাহিনী নয়। বিএনপি মনে করে, এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আগামী দিন থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার বন্ধসহ রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে সহযোগিতা করবে।
আর কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার না করে এবং মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দেওয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করি, সরকারের সুবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটাধিকার প্রয়োগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করে জনগণের দাবির মুখে পদত্যাগ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৮ ও ২০১৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অসম্মানিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও দেশের মানুষ ভোট দিতে যাবেন না।
দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে শীর্ষ নেতাদের মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এই নেতা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সরকারের পেটোয়া বাহিনী করছে। আর ঢাকার সমাবেশে যেখানে গুলি করা হচ্ছে, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছে; সেখানে কে দাঁড়াবে।’ দলের কর্মীরা তো ছিলেন, এই প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান পরবর্তী প্রশ্ন আহ্বান করে বলেন, ‘নেক্সট।’