মেয়র পদে বিএনপির প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও বরিশালে দলের সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর পদে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থী হতে তাঁরা আগেভাগেই নিজ নিজ এলাকায় নানা তৎপরতা শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পরই নগরজুড়ে কানাঘুষা ছিল যে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলটির অনেক নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে নগর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এমন সম্ভাবনাকে তখন পাত্তা দেননি।
শুধু কাউন্সিলর নয়, মেয়র পদে বিএনপির প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য কামরুল বর্তমানে দলের কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে নানা ধরনের জবাবদিহির মধ্যে পড়েছেন দলের স্থানীয় নেতারা। কামরুলের বাবা আহসান হাবিব কামাল গত বছর মারা যান। তিনি বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দলটি। দলের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ২৯ নেতা কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণ করায় তাঁদের সবাইকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিএনপি এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও বরিশালে বিএনপি নেতা-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখা যায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বরিশাল সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন বরিশালের অন্তত ২৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির বর্তমান এবং সাবেক নেতারা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন আছেন বর্তমান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া পাঁচজন আছেন সদস্য। এ ছাড়া ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, বিভিন্ন পদে থাকা সাবেক নেতারা আছেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের মধ্যে সাতটিতে দলের বর্তমান ও সাবেক নেতারা প্রার্থী হয়েছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডের অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডে দলের নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে অস্বস্তি ছিল। এসব প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখতে দলের দায়িত্বশীল নেতারা নানা তৎপরতা চালান। এতে কয়েকজন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেও বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এই তৎপরতা সফল হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য দলের নেতারা মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন।
মহানগর বিএনপির অন্তত পাঁচজন নেতার সঙ্গে বুধবার প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে এসব প্রার্থী দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। এ জন্য তাঁদের দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে বোঝানোও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাতে কাজ হয়নি। অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে নগর বিএনপির বেশ কয়েকজন পদধারী নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় তাঁরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন।
নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবার প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব জিয়াউল হক। জিয়াউল নগর বিএনপির সদস্যসচিব ও বর্তমান কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া এই ওয়ার্ডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদিও প্রার্থী হয়েছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ওরফে টিপু। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ। এ ছাড়া ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির ১ নম্বর সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর আ ন ম সাইফুল আজিম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক নেতা ফিরোজ আহম্মেদ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক নেতা হুমায়ূন কবির মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
২২ নম্বর ওয়ার্ডে জমা দিয়েছেন নগর বিএনপির ১ নম্বর সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর আ ন ম সাইফুল আজিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় বিধিনিষেধ আছে, এটা ঠিক। তবে স্থানীয় ভোটারদেরও চাপ আছে। তারপরও মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ আছে। দেখি কী করা যায়।’
এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৬ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন মজিদা বোরহান, ৭ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন সেলিনা বেগম ও ১০ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন রাশিদা পারভীন।
জানতে চাইলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় রাজনীতি করি। দীর্ঘদিন ওয়ার্ডের মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে আছি। মানুষের এই ইচ্ছাকে অবজ্ঞা করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রার্থী হয়েছি।’ হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাউন্সিলর হলে তো কিছু মানুষের উপকার করা যায়। বিশেষ করে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা উপকৃত হবে। আমার মনে হয় দলের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এরপরও বহিষ্কার করা হলে কী আর করার।’
এদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। কামরুল গতকাল বুধবার দুপুরে বলেন, ‘নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৪টিতে আমাদের প্রার্থী আছে। ৭টি সংরক্ষিত আসনেও প্রার্থী আছে। আমরা সবাই আলোচনা করেই নির্বাচনী মাঠে নেমেছি।’
কামরুল বলেন, ‘আমি এখনো আশঙ্কার মধ্যে আছি প্রার্থিতা নিয়ে। কারণ, সরকারি দল চাইছে না, তাদের সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ প্রার্থী হোক। এ জন্য আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। দুদক আমাকে নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করেছে। এখনো নানা তৎপরতা চলছে আমার প্রার্থিতা বাতিলের।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, আমরা তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করব। তা না করলে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা বাস্তবায়ন হবে।’