নরসিংদীর চরাঞ্চল: টেঁটাযুদ্ধের শুরু আছে, শেষ নেই

টেঁটাযুদ্ধের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে জেলার রায়পুরার চার ইউনিয়নে প্রাণ গেছে অন্তত ৫০ জনের।

নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধ অনেকটা সাধারণ ঘটনা
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর এক কলেজে একাদশ শ্রেণির ক্লাস চলছিল। হঠাৎ এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, এক্ষুনি বাড়ি যেতে হবে। ছুটি লাগবে।’ এমন কী হলো যে তড়িঘড়ি করে বাড়ি যেতে হবে?—জানতে চাইলে ছাত্র প্রথমে কিছু বলতে চাইছিল না। চাপ দিতেই বলল, ‘এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ শুরু হয়েছে। যদি না যাই, আমাদের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হবে।’ টেঁটাযুদ্ধের ভয়াবহতা যে এমন পর্যায়ে চলে গেছে, সে কথা ভেবে অবাক হন শিক্ষক।

টেঁটাযুদ্ধের ঘটনাটি ছিল রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের একটি গ্রামের। নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের মধ্যে মেঘনার চরবেষ্টিত ১১টি ইউনিয়নে এমন চিত্র বেশ স্বাভাবিক। একসময় স্থানীয় দুই পক্ষ শুধু টেঁটা নিয়ে সংঘাতে জড়াত, পরে এর সঙ্গে যুক্ত হলো আগ্নেয়াস্ত্র। সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে সদর উপজেলার চরদিঘলদীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধে অন্তত ১৫ জন আহত হন। শরীরে টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় সাতজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রায়পুরার নিলক্ষা, বাঁশগাড়ী, মির্জারচর ও পাড়াতলী ইউনিয়নের নাম টেঁটাযুদ্ধের ঘটনায় বারবার আসে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এই চার ইউনিয়নে টেঁটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেছে বাঁশগাড়ী ও মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ অন্তত ৫০ জনের। আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ।

কাঁটাযুক্ত তিনটি লোহার পাত বাঁকিয়ে চিকন বাঁশের ডগায় আটকে তৈরি করা হয় টেঁটা। স্থানীয় লোকজন বলেন টেকাইট্টা। সাধারণত নদী থেকে মাছ ধরায় লাগে এগুলো। তবে এক দল মানুষ যুগের পর যুগ ধরে টেঁটা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে। মাছ মারার মতো করেই তারা মানুষ মারছে।
রায়পুরায় টেঁটাযুদ্ধ

৮ থেকে ১০টি গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী টেঁটাযুদ্ধের সংস্কৃতি অন্তত ১০০ বছরের বলে দাবি নিলক্ষা ইউপির চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামানের। তাঁর মতে, বাবার মৃত্যুর পর বংশানুক্রমে ছেলে এই গোষ্ঠী বিরোধে নেতৃত্ব দেন। সাধারণ মানুষ না চাইলেও নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গোষ্ঠীপ্রধানেরা টেঁটাযুদ্ধ টিকিয়ে রাখছেন।

টেঁটাযুদ্ধ কী, কেন

কাঁটাযুক্ত তিনটি লোহার পাত বাঁকিয়ে চিকন বাঁশের ডগায় আটকে তৈরি করা হয় টেঁটা। স্থানীয় লোকজন বলেন টেকাইট্টা। সাধারণত নদী থেকে মাছ ধরায় লাগে এগুলো। তবে এক দল মানুষ যুগের পর যুগ ধরে টেঁটা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে। মাছ মারার মতো করেই তারা মানুষ মারছে।

চার ইউনিয়নের অন্তত ৫০ নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি টেঁটাযুদ্ধের শুরু তুচ্ছ ঘটনায়। ধরা যাক, এক জেলে মাছ ধরার জন্য নদীতে চাঁই ফেলেছেন শ খানেক। রাতের আঁধারে কেউ সেখানকার ৮-১০টি চাঁই ভেঙে দিলেন। এ জন্য তাঁর কাউকে সন্দেহ হলো। দুই পক্ষ বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াল। এরপর বিচার চলে যায় গোষ্ঠীপ্রধানের কাছে।

কিংবা ধরা যাক, গ্রামের চায়ের দোকানে গিয়ে কেউ এক কাপ চা চাইলেন। দোকানির হয়তো চা দিতে দেরি হলো। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগ্‌বিতণ্ডা হলো। ক্রেতা রাগ করে চা পান না করে চলে গেলেন। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না। এ ঘটনা পৌঁছে যায় গোষ্ঠীপ্রধানের কাছে।

‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ সাজ

টেঁটাযুদ্ধে রায়পুরার ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি

গোষ্ঠীপ্রধানেরা নিজেরা বসে এগুলো সমাধান করেন না। বরং উসকে দেন, উত্তেজনা ছড়ান। এক পক্ষের লোকজন যখন আরেক পক্ষের কাউকে একা পান; তখন গালিগালাজ, মারধর করেন। পাল্টাপাল্টি চলতে চলতে উত্তেজনা যখন চরমে পৌঁছায়, তখন টেঁটাযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

এক পক্ষ দিনক্ষণ ঠিক করে হামলার ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে প্রতিপক্ষও প্রস্তুতি নেয়। যুদ্ধ যুদ্ধ সাজ পড়ে যায়। নিজেদের পক্ষে লোক ভাড়া করে আনে আশপাশের এলাকা থেকে। পূর্বঘোষিত দিনে দুই পক্ষ টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যে পক্ষে হতাহত বেশি হয়, সে পক্ষই বিজয়ী হিসেবে বিবেচিত হয়।

মামলা করার জন্য তাঁরা থানা-পুলিশের সহযোগিতা পান। আর পরাজিত পক্ষের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চলে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে তাঁরা এলাকাছাড়া হন। যখন তাঁরা ফেরেন, আবার সংঘর্ষ হয়। এভাবেই চলতে থাকে।

২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে-পরে টেঁটাযুদ্ধ হয়েছে। পড়ে থাকা বাড়িঘরগুলো পরাজিত পক্ষের। এসব বাড়ির লোকজন নরসিংদী শহর, রায়পুরা সদর বা পাশের কোনো উপজেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে, বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়তো ফিরে আসবেন।
পাড়াতলীর শাহালম

সরেজমিনে ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ পাড়াতলী

গত ১৭ আগস্ট পাড়াতলীর কাচারীকান্দিতে গিয়ে মনে হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা। ভেঙে বা পুড়িয়ে দেওয়া সারি সারি ঘর। পুড়িয়ে দেওয়ার পর লতাপাতায় ঢেকে আছে এমন ঘর ৪৮টি। আরও দুই শতাধিক পাকা ঘরের দরজা-জানালা ভাঙা, টিনের ঘরগুলো ঝাঁঝরা। অল্প কয়েকটিতে এক বা দুজন প্রবীণ নারীকে দেখা গেলেও পুরুষ নেই।

পাড়াতলীর শাহালম নামের একজন বললেন, ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে-পরে টেঁটাযুদ্ধ হয়েছে। পড়ে থাকা বাড়িঘরগুলো পরাজিত পক্ষের। এসব বাড়ির লোকজন নরসিংদী শহর, রায়পুরা সদর বা পাশের কোনো উপজেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে, বাড়ি বানিয়ে থাকছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়তো ফিরে আসবেন।

কাচারীকান্দিতে ঘুরতে ঘুরতে চোখ গেল একটি চৌচালা টিনের ঘরের দিকে। চালা থাকলেও চারপাশের টিন নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বললেন, ঘরটি করিম মাস্টারের। প্রতিপক্ষের লোকজন ঘরটির চারদিকের টিন খুলে নিয়ে গেছে। তিনি এখন পরিবার নিয়ে নরসিংদী শহরে থাকেন।

পাড়াতলী ইউপির চেয়ারম্যান মো. ফেরদৌস কামাল বলেন, ‘এমপি সাহেবের (সংসদ সদস্য) বাড়িতে কয়েক দফা সভা করার পর তিন মাস আগে আমরা দুই গোষ্ঠীর নেতাদের মিলিয়ে দিয়েছি। এলাকাছাড়া লোকজন ফিরতে শুরু করেছেন।’

এই রকম চিত্র দেখা গেল বাঁশগাড়ী, মির্জারচর ও নিলক্ষা ইউনিয়নে গিয়েও।

তাঁরা নিজেরা সচেতন না হলে টেঁটাযুদ্ধ কোনো দিনই বন্ধ হবে না।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসগর হোসেন

টেঁটাযুদ্ধে কী ‘মধু’

চার ইউপির চেয়ারম্যানরাই স্বীকার করলেন, টেঁটাযুদ্ধ মানে টাকার খেলা, নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখা। এ কারণে ছোটখাটো বিষয় থেকে জমির দখল, পারিবারিক বা রাজনৈতিক বিবাদে টেঁটা-বল্লম হাতে তুলে নেন এখানকার মানুষ। নতুন যুক্ত হয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ও ককটেল।

আগে গোষ্ঠীগত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টেঁটাযুদ্ধ হলেও এখন স্থানীয় রাজনীতি এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বা সদস্য হতে হলে এসব গোষ্ঠীর সহযোগিতা লাগে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মির্জারচর ইউপির চেয়ারম্যান জাফর ইকবালকে (মানিক) শান্তিপুর বাজার এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও জাফরের কাছে হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুকুল ইসলাম। এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর নামে মামলা হয়। তবে ফারুকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মির্জারচর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান নিহত জাফর ইকবালের স্ত্রী মোসা. মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যার পরপরই তাঁর সমর্থকেরা আসামিদের কিছু বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছিলেন। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর শান্তি ফিরিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু মামলার প্রধান দুই আসামি জামিনে বের হয়ে এলাকা আবার অশান্ত করে তুলছেন।’

প্রশাসন বিরোধ মিটিয়ে দিলেও তা বেশি দিন টেকে না বলে দাবি রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসগর হোসেনের। তিনি বলেন, তাঁরা নিজেরা সচেতন না হলে টেঁটাযুদ্ধ কোনো দিনই বন্ধ হবে না।

ছেলে কুয়েতে থাকায় আমাদের ৭০ হাজার টাকা চাঁদা ধরা হয়েছিল। টেঁটাযুদ্ধে যাতে অংশ নেওয়া না লাগে, তার জন্য ছেলে ওই টাকা দুই ধাপে গোষ্ঠীপ্রধানকে দিয়েছে। প্রতিবার টেঁটাযুদ্ধের আয়োজন হলেই এভাবে টাকা দিতে হয়।
ফজলুর রহমান

‘চাঁদায়’ রসদ, অমান্যে ‘একঘরে’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন এলাকার পাঁচজন গোষ্ঠীপ্রধান বলেন, টেঁটাযুদ্ধে জড়ানোর আগে অস্ত্র-ককটেল কেনা, যোদ্ধা ভাড়া করা, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুলিশ ও রাজনীতিবিদ ম্যানেজ করা, মামলা চালানোর মতো খাতে খরচের জন্য উভয় পক্ষই জরুরি সভা ডেকে টাকা সংগ্রহ করে। এসব এলাকার বেশির ভাগ পরিবারের সদস্য প্রবাসী হওয়ায় পরিবারপ্রতি চাঁদা ধার্য করা হয়। যাঁরা চাঁদা দেন না বা দিতে চান না, তাঁদের একঘরে করে দেওয়া হয়। পরিবারপ্রতি ১০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। একবার টেঁটাযুদ্ধের আয়োজন করা হলে পক্ষ ও বিপক্ষের দুটি দল, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি—সব পক্ষেরই লাভ বলে তাঁদের দাবি।

তবে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমানের দাবি, টেঁটাযুদ্ধ হলে পুলিশ লাভবান হয়, তাই এটি জিইয়ে রাখে—কথাটি সত্য নয়। অপরাধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রচার চালিয়ে সংঘাত যে স্থায়ী সমাধান নয়, তা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।

মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের কামাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, গত ইউপি নির্বাচনের সময় টেঁটাযুদ্ধ ঘিরে তিন ধাপে তিনি এক লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন। শুরুতে ৫০ হাজার, পরে দুই ধাপে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা না দিলে তাঁর পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হতো কিংবা বাড়িতে হামলা চালিয়ে এলাকাছাড়া করা হতো।

একই এলাকার ষাটোর্ধ্ব ফজলুর রহমান বলেন, ‘ছেলে কুয়েতে থাকায় আমাদের ৭০ হাজার টাকা চাঁদা ধরা হয়েছিল। টেঁটাযুদ্ধে যাতে অংশ নেওয়া না লাগে, তার জন্য ছেলে ওই টাকা দুই ধাপে গোষ্ঠীপ্রধানকে দিয়েছে। প্রতিবার টেঁটাযুদ্ধের আয়োজন হলেই এভাবে টাকা দিতে হয়।’

রাজনৈতিক ব্যর্থতা না বিচারহীনতা

এসব চরাঞ্চলের অনেকেই মনে করেন, টেঁটাযুদ্ধের পেছনে রায়পুরার পাঁচবারের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদের দায় কম নয়। টেঁটাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া সব কটি গোষ্ঠীই তাঁর অনুসারী।

অভিযোগের বিষয়ে রাজিউদ্দীন আহমেদ পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকার কথা বললেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে টেঁটাযুদ্ধ এত দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তুচ্ছ ঘটনায় কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতি থেকে পুরো গোষ্ঠী এক হয়ে যায়। অপর পক্ষও তৈরি হতে থাকে। চাঁদা তুলে ভাড়ায় লোক ও আগ্নেয়াস্ত্র-ককটেল এনে টেঁটাযুদ্ধে জড়ায়। আগে টেঁটা-বল্লমের আঘাতে গুরুতর আহত হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু এখন দেশীয় বন্দুকের ব্যবহার বাড়ায় মৃত্যু বাড়ছে।

৫১ বছর ধরে নরসিংদীতে সাংবাদিকতা করছেন দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি নিবারণ রায়। তিনি মনে করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের স্বার্থেই এসব চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধ জিইয়ে রেখেছেন। এযাবৎ যত টেঁটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে, একটিরও বিচার হতে দেখেননি তিনি। অন্তত চার-পাঁচটা টেঁটাযুদ্ধের বিচার হলেই অনেকাংশে এসব থেমে যেত বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া এসব এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি বাড়ানো না গেলে টেঁটাযুদ্ধের মতো বর্বরতা কমবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংঘাতের শেষ কোথায়

টেঁটাযুদ্ধ জীবনকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, সে কথা বলছিলেন পাড়াতলীর যুবক শামীম (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগের কথা। গোষ্ঠীর বিবাদে জড়াতে চাইনি। এ জন্য মাকে বাড়িতে রেখে পরিবারের বাকিরা নরসিংদী শহরের ভাড়া বাসায় উঠি। টেঁটাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বিজয়ী পক্ষের এক দল ছেলে আমাদের বাড়িতে ঢুকে মাকে ভয় দেখায়, এলাকা ছাড়তে বলে। মা বাড়ি না ছাড়ায় তারা চাঁদা চেয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তখন মাকে নরসিংদীতে নিয়ে এসেছি।’

তবে এ ঘটনায় শামীম কোনো মামলা করেননি। বললেন, মামলা করলে আর এলাকায় যেতে পারবে না তাঁর পরিবার। তাঁর মা ফেলে আসা বাড়িতে কোনো দিন ফিরতে পারবেন কি না, তা ভেবে মন খারাপ করেন। তাঁর কাছে জানতে চান, এই সংঘাতের শেষ কোথায়?