বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে মো. নুরুজ্জামানসহ (সাদা পাঞ্জাবি) অন্য আসামিরা।
বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে মো. নুরুজ্জামানসহ (সাদা পাঞ্জাবি) অন্য আসামিরা।

শাজাহানপুর থানায় ‘হামলা’

রোগ ধরা পড়েনি, হাসপাতালে আয়েশি সময় কাটছে আসামি নুরুজ্জামানের

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় ‘হামলা’র ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান নুরুজ্জামানকে অসুস্থ দেখিয়ে কারাগারের বদলে হাসপাতালে ‘আয়েশি’ সময় কাটানোর সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

গত শনিবার হৃদ্‌রোগ ও মাথায় আঘাত দেখিয়ে নুরুজ্জামানকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে হাসপাতাল প্রশাসন গতকাল রোববার জানায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নুরুজ্জামানের শরীরে কোনো রোগই ধরা পড়েনি।

এ সম্পর্কে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ভোটের মাত্র দুই দিন আগে অসুস্থতার ভান করে কারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কারাগার থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আয়েশি সময় কাটানোর কৌশল নিয়েছেন নুরুজ্জামান। হাসপাতাল থেকে আমার মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মীদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন। নুরুজ্জামানকে কারাগারের বাইরে রাখলে অবাধ ভোট নিয়ে সংশয়ের কথা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।’

সোহরাব অভিযোগ করে বলেন, কারাবন্দী অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমানের (আনারস প্রতীক) পক্ষে কাজ করছেন নুরুজ্জামান। প্রচারণার শুরু থেকেই  তিনি (নুরুজ্জামান) কারাগার থেকে মোটরসাইকেলের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে থানায় হামলায় অংশ নেওয়া নুরুজ্জামানের সঙ্গীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

গতকাল রোববার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে বেশ আয়েশি সময় কাটছে উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত নেতা নুরুজ্জামানের। ফলমূল থেকে শুরু করে ভালো ভালো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে তাঁকে। হাসপাতালের ভেতর তাঁর সঙ্গে অনায়াসেই দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন স্বজনেরা।

গতকাল রোববার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে বেশ আয়েশি সময় কাটছে উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত নেতা নুরুজ্জামানের। ফলমূল থেকে শুরু করে ভালো ভালো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে তাঁকে। হাসপাতালের ভেতর তাঁর সঙ্গে অনায়াসেই দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন স্বজনেরা।

নুরুজ্জামানের অসুস্থতার বিষয়ে কথা হয় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুরুজ্জামানের মাথায় ইনজুরি ছাড়াও বুকে হার্টের ব্যথা সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্টে নুরুজ্জামানের শরীরে তেমন কোনো রোগ ধরা পড়েনি।’

নুরুজ্জামানের মাথায় ইনজুরি ছাড়াও বুকে হার্টের ব্যথা সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্টে নুরুজ্জামানের শরীরে তেমন কোনো রোগ ধরা পড়েনি।
আবদুল ওয়াদুদ, উপপরিচালক, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বগুড়া কারাগারের জেলার আনোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজতি নুরুজ্জামান তাঁর বুকে ব্যথা ও মাথায় ইনজুরির সমস্যার কথা জানালে কারাগারের চিকিৎসা কর্মকর্তার পরামর্শেই শনিবার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কারারক্ষীদের প্রহরায় প্রিজন সেলে রেখে তাঁর শরীরে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। সেখান থেকে ফোনে বাইরের কোনো কোনো ব্যক্তিকে হুমকি দিয়েছেন বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। সোমবার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সেখান থেকে ফোনে বাইরের কোনো কোনো ব্যক্তিকে হুমকি দিয়েছেন বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। সোমবার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আনোয়ার হোসেন, বগুড়া কারাগারের জেলার

৫ এপ্রিল রাতে শাজাহানপুর থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৯ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই হামলায় ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনার পরপরই নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ দুটি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৪৫ ব্যক্তিকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত নুরুজ্জামানসহ ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।