সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির মাঝখানে কিছুটা উন্নতি হলেও এখন আবার ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে জেলার নদী ও হাওরে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, দুদিন ধরে সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। আগামী দুই দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও বড় কোনো বন্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে সদর উপজেলা, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুরের যাদুকাটা নদ, চারাগাঁও, কলাগাঁও, লাকমাছড়া, চানপুর এলাকা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামছে বেশি। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর ও শক্তিয়ারখলা এবং তাহিরপুরের আনোয়ারপুর এলাকায় ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় গতকাল রোববার থেকে সড়কটিতে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। স্থানীয় লোকজন এই তিন স্থানে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদ মিয়া বলেন, রোববার থেকে ব্যাপক পরিমাণে উজানের ঢল নামছে। এ কারণে এলাকার অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। মানুষের বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, তাঁর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে এবার প্রচুর পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে পানি বাড়ছে।তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আহমদ বলেন, রাতের ঢলে অনেকের বাড়িঘর ও উঠানে পানি এসেছে। পানি বাড়ছে। আগের বন্যার পানিই এখনো পুরোপুরি নামেনি। এখন আবার পানি আসায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় জেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম। আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় ২৫ হাজার পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। মানুষের স্বস্তি ফেরার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।