ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ যাঁরা নৌকায় ভোট দিছেন, আমরা মনে করি তাঁরা আমাদের রক্ত, আমাদের ভাই। কোনো নেতা-কর্মীর কথা বলতেছি না। সাধারণ নৌকার ভোটার আছেন না, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে নৌকায় ভোট দিচ্ছেন, তাঁরা আমাদের ভাই। নৌকার সাথে আমাদের বিরোধ নাই। আমরা আসল নৌকা। আমাদের বিরোধ ছিল যাঁকে বারবার নৌকা দিত। ওই ব্যক্তি এই তিন থানায় গত ৪০ বছরে কোনো কাজ করেন নাই। আমরা সেই ব্যক্তির বিপক্ষে। আমরা নৌকার বিপক্ষে না।’
আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক ব্যাপারীর বাড়িতে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন নিক্সন চৌধুরী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরী ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ভোট। এ নিয়ে কাজী জাফর উল্যাহকে তৃতীয়বারের মতো পরাজিত করলেন নিক্সন চৌধুরী।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমি পরশু দিন প্রধানমন্ত্রীকে নিজে বলে আসছি, আমি নুরুল্লাহগঞ্জে এক দোকানে ঢুকছি, এক মুরুব্বি তিনি আমার মাথা হাতাইয়া দোয়া কইরা দিছেন, চা খাওয়াইছেন। তিনি আমারে বুকে জড়ায় ধরছেন। আমি তাঁর চায়ের বিল দিছি। যাওয়ার সময় জড়াইয়া ধইরা কন, “বাজান তোমারে এত ভালোবাসি, কিন্তু ভোটটা নৌকায় দেব।” এ রকম মানুষ আছেন এখনো বাংলাদেশে। আমরা তাঁদের স্যালুট করি। তাঁদের কোনো দোষ নাই। দোষ হইলো ওই ডাকাতদের। এরা সমাজটাকে নষ্ট করে, এরা চাঁদাবাজি করে, ডাকাতি করে, এরা খুনখারাবি করে, দোষ হয় আওয়ামী লীগের।’
নিক্সন তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে বলছি, যাঁরা নৌকায় ভোট দিছেন তাঁদের গিয়ে বলবেন, এমপি সাহেবের দরজা আপনাদের জন্য খোলা। যাঁরা নৌকায় ভোট দিছেন, আমি মনে করি সব ভোট আমি পাইছি। নৌকার ভোট আমার ভোট। সেখানে কোনো বিভক্তি নাই। কিন্তু দুই-চারটা দালাল, এদের বিচার হবে। এরা আওয়ামী লীগকে বাঁচায়া রাখে না, এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে।’
পরাজিত নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহর নাম উল্লেখ না করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘এবার যেই বিজয়টা আসছে সেটা কিন্তু উন্নয়নের বিজয়। সেটা মূল্যায়নের বিজয়। একটা রাজনৈতিক নেতার তিন তিনবার পরাজিত হওয়ার পর এই অধ্যায় শেষ। যে ব্যক্তি চইলা গেছে আপনারা সবাই দোয়া করবেন, তার জন্য আমিও দোয়া করি।’
এ সময় উপস্থিত জনতা হেসে উঠলে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘থাক, মানুষকে নিয়ে হাসা উচিত না। যদি ভালো কাজ করত, তাহলে এই দিন ওনার দেখতে হইতো না। যদি মানুষের সাথে হাত মিলিয়ে টিস্যু দিয়া না মুছত, তাইলে কিন্তু এই দিন দেখতে হইতো না। তারপরও উনি শেষবার কাইন্দাকাইটা মাফ চাইছেন। আপনারা পারলে ওনারে মাফ কইরা দিয়েন। আমি ওনার ভাইস্তা হিসেবে ওনার পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি, লোকটার ৩০ বছরের অন্যায় আপনারা মাফ করে দিয়েন। আগামী দিনে ইনশা আল্লাহ, বঙ্গবন্ধুর নৌকার জোয়ার এই তিন থানা থেকে শুরু হবে। এখন আমাদের নতুন আঙ্গিকে আগাইতে হবে। আমাদের উন্নয়নের বাকি যে কাজগুলো আছে, সেগুলো করতে হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহেদীদ গামাল, সদরপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর কাজী, ঘারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর মুন্সী প্রমুখ।