সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সরকারি ইজারা দেওয়া মৎস্য আড়ত ভেঙে ব্যক্তিমালিকানাধীন মৎস্য আড়ত গড়ে তুলে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ জেলে, মাছচাষি, ক্রেতা, ভোক্তা ও ছোট ব্যবসায়ীরা চাঁদার বোঝা বহন করছেন। সেই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।
স্থানীয় মাছচাষি আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সুযোগে পেয়ে সমবায় সমিতির আড়তদারেরা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করছেন।
স্থানীয় জেলে, মাছচাষি, আড়তদার ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ-নাটোর মহাসড়কের পাশে উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুলে সরকারি নিউটাউন মৎস্য আড়তে অনেক বছর ধরে মাছ কেনাবেচা হয়ে আসছিল। সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া নিউটাউন মৎস্য আড়তের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হতো। মৎস্য আড়তটির ইজারামূল্য ছিল বছরে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জেলে ও খুচরা ব্যবসায়ীদের খাজনার টাকা ছিল সহনীয়। এতে উপকৃত হয়েছেন স্থানীয় জেলে, মাছচাষি, ক্রেতা, ভোক্তা ও বিক্রেতারা। জমজমাট ছিল আড়তটি।
গত বছর স্থানীয় কিছু মৎস্য আড়তদার মিলে সমবায় সমিতি করে সরকারি নিউটাউন মৎস্য আড়ত ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ব্যক্তিমালিকানাধীন সাত বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জের সীমান্তবর্তী কুতুবের চর এলাকায় নতুন মৎস্য আড়ত গড়ে তোলেন। বর্তমানে সেখানে শতাধিক পাইকারি মাছের দোকান আছে। আড়তটি নিয়ন্ত্রণ করছে কুতুবের চর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেড। এখানে প্রতিদিন দোকানের দাঁড়িপাল্লাপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাছ নিয়ে আসা প্রতিটি পরিবহন থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা। সমিতির নামে এভাবে চাঁদা আদায় করায় মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
প্রতিটি দোকানের দাঁড়িপাল্লাপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে সমিতি। এ ছাড়া আড়তে আসা পরিবহনের শ্রেণিভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।নওশের আলী, কুতুবের চর গ্রামের বাসিন্দা
সম্প্রতি কুতুবের চর এলাকায় নতুন মৎস্য আড়ত গিয়ে কথা হয়, সুজন মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী সূর্য কান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩০ জন সমিতির সদস্য ৫০ হাজার টাকা করে দিয়ে এই ঘরের জায়গাটি বরাদ্দ নিয়েছি। এ ছাড়া প্রত্যেক আড়তদার দুই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে এ আড়তের দোকান নিয়েছেন।’
আড়তের জমির মালিকদের একজন সদরুল ইসলাম। আলাপকালে তিনি বলেন, প্রথম বছর জমির মালিকদের বিঘাপ্রতি ১৮ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন সমিতির আড়তদারেরা। এখন তাঁরা কোনো ভাড়া নেন না। তবে প্রতিটি দোকানের দাঁড়িপাল্লাপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই আদায়ের অর্ধেক সমিতি নিয়ে বাকি অর্ধেক জমির মালিকদের দেওয়া হচ্ছে।
কুতুবের চর গ্রামের বাসিন্দা নওশের আলী বলেন, প্রতিটি দোকানের দাঁড়িপাল্লাপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে সমিতি। এ ছাড়া আড়তে আসা পরিবহনের শ্রেণিভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
কুতুবের চর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় সরকারিভাবে ইজারা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি আড়তের নামে ২০ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। আড়তের বাকি জায়গা ৮ থেকে ১০ ব্যক্তির সঙ্গে বছরমেয়াদি চুক্তি করে ভাড়া নিয়েছেন। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই ৩০ জন সদস্যের একটি সমবায় সমিতি গঠন করে আড়তটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটুস লরেন্স চিরান প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত আড়তটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়তটি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে।