বগুড়ায় থানায় হামলার ঘটনায় আরও দুজন গ্রেপ্তার, মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে মো. নুরুজ্জামানসহ (সাদা পাঞ্জাবি) অন্য আসামিরা। গত রোববার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলার মামলায় নতুন করে আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে তাঁদের নাম নেই। তদন্তে তাঁদের নাম আসায় গতকাল সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ওই দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে থানায় হামলা মামলাটির তদন্তভার শাজাহানপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে আজ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর নির্দেশে মামলাটি ডিবিতে ন্যস্ত করা হয়।

অপরদিকে থানায় হামলা মামলার হোতা ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান নুরুজ্জামান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাসান নাজমুলের বাসা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ১৫টি গুলি উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে যে মামলাটি করা হয়, তাতে গ্রেপ্তার নুরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ওই মামলার অপর আসামি হাসান নাজমুল পলাতক আছেন। এ ছাড়া থানায় হামলা মামলায় গ্রেপ্তার ৯ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। ওসি বলেন, থানায় হামলার মামলায় নতুন করে গ্রেপ্তার দুজন হলেন নুরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যবসায়িক অংশীদার উপজেলার সাজাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪০) এবং মোস্তাইল গ্রামের সুজন ইসলাম (২২)। এর মধ্যে সুজন ইসলাম স্বীকার করেছেন, থানায় হামলার দিনে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলার প্রধান হোতা ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান, উপজেলার মাঝিড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারন সম্পাদক নুরুজ্জামান

নুরুজ্জামান শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলার মাঝিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। হাসান নাজমুল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, থানায় হামলা এবং হামলার পর পুলিশের যৌথ অভিযানে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ১৫টি গুলি উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলার তদন্তভার আজ ডিবি পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

মামলা দুটির এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার আড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে দুটি বার্মিজ চাকুসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠুন হাসানকে আটক করেন উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে ফোন করেন নুরুজ্জামান। কিন্তু পুলিশ মিঠুনকে ছেড়ে না দিয়ে থানায় নেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৩৫-৪০ জনকে নিয়ে থানায় যান নুরুজ্জামান। তাঁরা মিঠুনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে ধস্তাধস্তি হয়। পরে তাঁরা হামলা করলে এসআই আনিসুরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে থানায় আসেন ওসি শহীদুল। তখন ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান নুরুজ্জামান। ওসি তাঁকে থানা থেকে বেরিয়ে যেতে বললে নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা করেন।

‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান নুরুজ্জামানসহ ও তাঁর সহযোগীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিদেশি পিস্তল ও গুলি। গত রোববার বিকেলে বগুড়া ডিবি কার্যালয়ে

পুলিশ জানায়, পুলিশের প্রতিরোধের মুখে থানা থেকে বেরিয়ে মাঝিড়া বন্দরে নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০০ থেকে ২৫০ জন ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা ও লোহার পাইপ। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে তাঁরা ইটপাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে লাঠিপেটা করে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ঘটনাস্থল থেকে নুরুজ্জামানসহ আটজনকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে থানায় আক্রমণ ও পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে রাতভর যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৯ জনকে আটক গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হামলায় ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনার পর নুরুজ্জামান ও তাঁর এক সহযোগীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ ২টি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

থানায় হামলার ঘটনায় নুরুজ্জামানসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করে গত রোববার সকালে একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় আটক ৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায় মোট ১১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় নুরুজ্জামান ও হাসান নাজমুলকে আসামি করে একই দিন পৃথক আরেকটি মামলা করে পুলিশ।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ এবং পুলিশের কাজে বাধা প্রদান করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশের সৃষ্টি করে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় নুরুজ্জামানকে রোববার রাতে শাজাহানপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।