উল্লাপাড়ায় চার মাদ্রাসায় কেউ পাস করেনি

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বগুড়া দাখিল মাদ্রাসার ১৫ জন শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি।
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চারটি মাদ্রাসার কোনো ছাত্র পাস করতে পারেনি। গতকাল রোববার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

উপজেলার বগুড়া দাখিল মাদ্রাসা, এলংজানী দাখিল মাদ্রাসা, হাজী আহমেদ আলী দাখিল মাদ্রাসা ও বড় কোয়ালিবেড় দাখিল মাদ্রাসায় কোনো পরীক্ষার্থী দাখিল পাস করতে পারেনি। এ ছাড়া উপজেলার আরও তিনটি মাদ্রাসা থেকে মাত্র একজন করে শিক্ষার্থী দাখিল পাস করেছে।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশের ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন পরীক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। উল্লাপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের দাখিল পরীক্ষায় উপজেলার বগুড়া দাখিল মাদ্রাসা, এলংজানী দাখিল মাদ্রাসা, বগুড়া দাখিল মাদ্রাসা ও উল্লাপাড়ার হাজী আহমেদ আলী মাদ্রাসা থেকে কেউ কৃতকার্য হয়নি।

উপজেলার বগুড়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৫ জন অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি। বগুড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আতিকুর রহমান বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে। অনেক চেষ্টা করেও তাদের ক্লাসে মনোযোগী করা যায়নি। একেবারেই লেখাপড়া করেনি। যে কারণে এমনটি হয়েছে।

এলংজানী দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১২ জন অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। ওই মাদ্রাসার সুপার শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার্থীরা বছরের বেশির ভাগ দিনই ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল। এ বিষয়ে অভিভাবকদের বারবার জানালেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এখন সবাই অকৃতকার্য হয়ে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের লজ্জার মধ্যে ফেলেছে।’

উল্লাপাড়ার হাজী আহমেদ আলী মাদ্রাসার ১৪ জন শিক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি।

উল্লাপাড়ার হাজী আহমেদ আলী মাদ্রাসা থেকে ১৪ জন অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। এই মাদ্রাসার সুপার সেফায়েত উল্লাহর ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিওভুক্ত হয় ১৯৯৮ সালে। এর পর থেকে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা পাস করেছে। কিন্তু করোনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস না করায় এবং মেয়েদের বাল্যবিবাহ হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে পাঠদানে তাঁদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না বলে জানান সেফয়েত উল্লাহ।

বড় কোয়ালিবেড় দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই মাদ্রাসার সুপার শফিক উদ্দিন বলেন, বিষয়টি খুবই লজ্জার ও দুঃখজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই নিয়মিত ক্লাস না করার কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। অনেক চেষ্টা করছেন; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

অন্যদিকে, উপজেলার খোন্দকার নুরুন্নাহার দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১০, উধুনিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৬ ও হাজী আবেদ আলী মেমোরিয়াল মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তিনটি মাদ্রাসা থেকে মাত্র একজন করে পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম শামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য ভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা সরেজমিন দেখে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।