জেলেরা শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে যেতে পারছেন। তবে এবার অনুমতিপত্রের সঙ্গে বনে চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
দীর্ঘ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাচ্ছেন জেলেরা। তবে এবার বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলেদের অনুমতিপত্র নবায়ন করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট খালের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েকটি নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তাঁরা।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে জেলেরা কেউ মাছ ধরার জাল টেনে নৌকায় তুলছেন। নৌকার সামনের অংশে বরফ আর প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই রেখে তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুন্দরবন যাত্রার। কেউ অনুমতিপত্র (পাস) না পেয়ে বন বিভাগের কার্যালয়ের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছেন। আবার কেউ অনুমতিপত্র নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। তবে সব জেলের মন খারাপ।
জেলেরা জানান, এবার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র নেওয়া জেলেরা ওই স্টেশনের অধীন সুন্দরবনের বাইরের খালে মাছ ধরতে পারবেন না। জেলেদের অনুমতিপত্রে এবারই প্রথম নির্দিষ্ট করে খালের নাম উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিগত বছরগুলোয় অনুমতিপত্র যেখানেরই হোক, অভয়ারণ্য বাদে সুন্দরবনের যেকোনো খালে মাছ শিকার করা যেত। নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার এই নির্দেশনায় জেলেদের মুখ মলিন হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় রয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সুন্দরবনের প্রতিটি ফরেস্ট স্টেশনকে জেলেদের অনুমতিপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দেশ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলোর অন্যতম হচ্ছে জেলেদের অনুমতিপত্রে মাছ ধরার নির্দিষ্ট খালের নাম লিখে দিতে হবে। অনুমতিপত্রের মেয়াদ অনুযায়ী জেলেরা টানা সাত দিন একই খালে অবস্থান করবেন। অন্য কোথাও মাছ ধরতে যাওয়া যাবে না। এ ছাড়া সুন্দরবনে অবস্থানকারী জেলেদের তালিকা বনরক্ষীদের ক্যাম্প কর্মকর্তার কাছেও থাকবে। বনরক্ষীরা তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি খালে টহল দিয়ে জেলেদের নৌকা যাচাই করে দেখবেন।
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে নদীতে বেঁধে রাখা নৌকার পাটাতন সংস্কার করছিলেন জেলে আবু মুসা। তিনি বলেন, ‘এই স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র নিয়েছেন ৯ শতাধিক জেলে। অথচ এখানে নদী ও খালের সংখ্যা কম। এখন যদি বাইরে কোথাও মাছ না ধরতে দেয়, তাহলে এক জায়গায় একাধিক জেলে মাছ ধরলে মাছ পাবেন না। আমরা বড্ড বিপদে পড়েছি। তবু জীবিকার তাগিদে বনে যাচ্ছি, দেখি কী হয়।’
তার পাশের নৌকায় জাল, কাঠ ও বরফ ওঠাচ্ছিলেন জেলে রবিউল ইসলাম। তিনি বলে ওঠেন, ‘আগে একটি খালে মাছ না পড়লে অন্য খালে যেতে পারতাম। এবার সে সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মাছ পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত।’
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার পাথরখালী গ্রামের জেলে রুহুল আমিন, গুড়িয়াবাড়ী গ্রামের কামরুল ইসলাম, গেবরা গ্রামের সাইফুল্লাহসহ অনেক জেলে জানান, এত দিন সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পরিবার–পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে তাঁদের দিন কেটেছে। প্রত্যেকের ঋণের বোঝাও বেড়েছে। এখন আবার বন বিভাগ নতুন নির্দেশনা দিয়েছে, নির্ধারিত খালের বাইরে মাছ ও কাঁকড়া ধরা যাবে না। এভাবে চললে বেশি মাছও ধরা যাবে না, ধারদেনাও শোধ করতে পারবেন না তাঁরা।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, ‘এ স্টেশনের আওতায় ৯৪৩টি নৌকার অনুমতিপত্র রয়েছে। এত দিন সুন্দরবনকেন্দ্রিক একটি মহাজন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলেরা এক স্টেশন থেকে পাস নিয়ে অন্য স্টেশনের আওতাধীন বনের নিষিদ্ধ এলাকা অভয়ারণ্যে চলে যেতেন। খাল নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় তাঁরা আর এ সুযোগ পাবেন না।’
সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে। আজ (গতকাল) পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জের ২৬৫টি নৌকায় অনুমতিপত্র নিয়ে ১ হাজার ৭৭৬ জন জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।