গোখাদ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। কিন্তু গরু ও দুধের দাম বাড়েনি। খামারিরা এখনো প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকাতেই বিক্রি করছেন।
রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি দফায় দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় হাঁসফাঁস করছেন খামারিরা। লোকসান হওয়া অনেকে খামার বন্ধ করেও দিয়েছেন।
দুই উপজেলার অন্তত ২০ জন পশুপালনকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খড় ও ঘাসের পাশাপাশি গরু-ছাগলকে গমের ভুসি, ডালের খোসা, চালের খুদ, ধানের কুঁড়া এবং বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি কৃত্রিম ফিড (দানাদার খাদ্য) খাওয়ানো হয়। কিন্তু গত ১০ দিনে গমের ভুসি কেজিতে ১০ টাকা, ডালের খোসায় ৮, চালের খুদে ৪ ও দানাদার ফিডে ৬ টাকা বেড়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন গোখাদ্যের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে গমের ভুসি প্রতি বস্তা (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৮৫০ টাকা, ডালের খোসা প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১ হাজার ২৫০ টাকা, চালের খুদ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ১ হাজার ৫০০ টাকা, দানাদার ফিড প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১ হাজার ১৫০ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি কেজি ভুসি ৫০ টাকা, ডালের খোসা ৫০, চালের খুদ ৩০ ও দানাদার ফিড ৪৬ টাকা ছিল। বর্তমানে প্রতি বস্তা ভুসি ২ হাজার ২৫০ টাকা, ডালের খোসা ১ হাজার ৪৫০, চালের খুদ ১ হাজার ৭০০ ও দানাদার ফিড ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব গোখাদ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ভুসি ১০ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ টাকা, ডালের খোসা ৮, চালের খুদ ৪ ও দানাদার ফিড ৬ টাকা।
তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায় গরুর ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৯০টি খামার রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় আড়াই লাখ গরু কৃষকদের ঘরে আছে।
তারাগঞ্জের মেনানগর গ্রামের গরুর খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছরেই তিন-চার দফায় গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। নতুন বছরেও খাদ্যের দাম বাড়ল। কিন্তু দুধ আর গরুর দাম তো ঠিক আগের মতোই আছে। গরু পালন করে এখন আর পোষাচ্ছে না, লোকসান হচ্ছে।
বরাতি গ্রামের আরেক খামারি লাবণী আক্তার বলেন, এভাবে দিনের পর দিন গোখাদ্যের দাম বাড়লে খামারিরা টিকতে পারবেন না। গাভিকে খড়ের পাশাপাশি ফিড, ভুসি, বুটের খোসা, ক্যালসিয়াম নিয়মিত খাওয়াতে হয়। তা না হলে ঠিকমতো দুধ পাওয়া যায় না। কিন্তু বাজারের খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে। সে অনুপাতে কিন্তু দুধের দাম বাড়ছে না। আগে ৪০ টাকা ছিল, এখনো দুধের দাম ৪০ টাকাই আছে।
ইকরচালী বাজারের গোখাদ্য ব্যবসায়ী শাহ মো. এরশাদ আলী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখীর কারণে গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন বছরে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সব ধরনের গোখাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। কেনা দামের চেয়ে সামান্য লাভ ধরে আমরা বিক্রি করছি। তবে আগের তুলনায় বিক্রি কমেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান বলেন, ‘খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য আমরা কাঁচা ঘাস বেশি করে গাভিকে খাওয়ানোর জন্য খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।’