ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন ফরহাদ হোসেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসেন মেহেরপুরে। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে জয়ী হয়ে পরের বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পেয়ে যান।
এরপর ধীরে ধীরে মেহেরপুরে দলীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি পর্যন্ত সবই চলে যায় ফরহাদ হোসেনের পরিবারের দখলে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, পরিবারের সদস্য, স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের দলীয় বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (দোদুল)। তাঁদের অনেককে জনপ্রতিনিধিও বানিয়েছেন। তাঁদের দিয়েই জেলার ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। বিপরীতে কোণঠাসা করেছেন দলের ত্যাগী নেতাদের। তাঁর বিপক্ষে গেলে দলীয় নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। ফরহাদের ভাই ও ভগ্নিপতির দাপটে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তটস্থ থাকতেন।
কলেজশিক্ষক থেকে মন্ত্রী
ফরহাদ হোসেনের বাবা ছহিউদ্দীন বিশ্বাস ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তবে সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আগপর্যন্ত দলে কোনো পদ ছিল না ফরহাদের। এলাকায় সজ্জন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো বোন সৈয়দা মোনালিসা ইসলামকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি হওয়ার পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনে যান। সবশেষ ২০২২ সালেও দলের সম্মেলনে তিনি একই পদ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ফরহাদ হোসেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন ফরহাদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় মেহেরপুরে সাবেক এই মন্ত্রীর বাসভবনের সামনের গাড়ি রাখার টিনের ছাউনি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফরহাদ হোসেনের ‘ব্যক্তিগত কার্যালয়ে’ ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে শহরের বড়বাজার সড়কে পৌর কমিউনিটি হলের সামনে ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরফরাজ হোসেনের বাণিজ্যিক তিনতলা ভবনের নিচতলা একটি দোকান পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর আদাবর থানার পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরহাদ হোসেনকে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে ফরহাদ হোসেন স্ত্রীসহ অন্তত ১৭ স্বজন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদ পেয়েছেন। ভগ্নিপতি আবদুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বোন শামীম আরা মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ও চাচাতো ভাই আমিরুল ইসলাম সদস্য পদে আছেন। বড় ভাই ইকবাল হোসেন মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাবার ফুফাতো ভাই সদ্য প্রয়াত বোরহান উদ্দিন ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফুফাতো ভাই মোমিনুল ইসলাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারাদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ভাতিজা আদিব হোসেন মেহেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আছেন।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সাত নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ফরহাদের আধিপত্যের বিরোধিতা করা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন তিনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে দুটি ধারা তৈরি হয়, যার অন্যপক্ষে নেতৃত্ব দিতেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিয়াজান আলী, সহসভাপতি ইয়ারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ফরহাদ হোসেন সৈয়দ আশরাফের চাচতো বোনকে বিয়ে করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ তাঁর আর্বিভাব ঘটে মেহেরপুরের আওয়ামী রাজনীতিতে। এমপি বনে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগকে পারিবারিক দল হিসেবে গড়ে তোলেন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে নিজের একক নিয়ন্ত্রণে নেন। ২০১৪ সাল থেকে জেলায় সরকারের যতগুলো উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে, এসব পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তাঁর স্বজনেরা করেছেন।
ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, মেহেরপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উন্নয়নকাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি বাবলু বিশ্বাস ও ভাই সরফরাজ হোসেন। মূলত অন্যদের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে বাবলু বিশ্বাস তা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারেরা।
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের আহ্বান করা মুজিবনগর-দর্শনা সড়কের ১৪০টি গাছ বিক্রির দরপত্রে অংশ নিতে গিয়েছিলেন গাংনী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মজিরুল ইসলাম ও আবদুল লতিফ। দরপত্র জমাদানের সময় হামলার শিকার হন তাঁরা। ওই সময় ১৮টি শিডিউল বিক্রি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জমা পড়ে মাত্র দুটি। শেষে মাত্র ৭০ লাখ টাকায় গাছগুলো কিনে নেন ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন।
২০২১ সালের ২১ জুন নিজ দপ্তরে মারধরের শিকার হন মেহেরপুরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুজ কুমার দে। ঘটনার পর এই প্রকৌশলী বলেছিলেন, শহীদুল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সওজের একটি সড়ক সংস্কারের ঠিকাদারি কাজ পায়। ওই কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বারিকুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ কর্মী রাশেদুল ইসলাম। তাঁরা ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি বাবলু বিশ্বাসের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা দপ্তরে এসে কাজ সম্পন্ন না করেই বিল তুলতে চাপ প্রয়োগ করেন। রাজি না হওয়ায় একপর্যায়ে তাঁরা দুজন মারধর করে চলে যান। ওই ঘটনায় তখন থানায় কোনো মামলা করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
গত বছরের ২০ অক্টোবর সরফরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা করেছেন দেবাশীষ বাগচি নামের এক ব্যক্তি। একসময় তিনি সরফরাজের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি সরফরাজের সঙ্গে যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৌশলী, এলজিইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫টি দরপত্র তিনি প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নেন। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে সরফরাজ হঠাৎ কিছু না বলে তাঁকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন। পাওয়া টাকা চাইলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। একপর্যায়ে পাওনা টাকা বাবদ গত বছরের ১২ জুলাই ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে, ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। পরে আদালতে মামলা করেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগে ছোট একটি ওষুধের দোকানে বসতেন সরফরাজ হোসেন। ভাই এমপি হওয়ার পরপরই তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত হন। প্রভাব বিস্তার করে দরপত্র বাগিয়ে নিতেন। এরপর তিনি পৌরসভা কমিউনিটির সামনে বড় বাজার সড়কের পাশে ৬ কাটা জমি কিনে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন।
দাপট দেখিয়েছেন ভাই-ভগ্নিপতি
বাবলু বিশ্বাস দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফরহাদ হোসেনের পক্ষে এক সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল মান্নানকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘কিসের ভয় দেখায়, আমি তো বুঝতি পারিনি। আমার চেয়ে মস্তান বেশি আছে কেউ? আমার চেয়ে যন্ত্রপাতি কারও বেশি আছে? আমার চেয়ে কি টাকা তাদের বেশি আছে? তাহলে ভয় কিসের দেখায়?’ একই সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘পিরোজপুর ইউনিয়নের চারটি সেন্টারে (ভোটকেন্দ্রে) আমি যেন দেখতে না পাই কোনো এজেন্ট আছে ওই চাপা দেওয়া জিনিসের (ট্রাক প্রতীকের)।’
বাবলু বিশ্বাস সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এলাকাবাসী প্রথম আলোকে বলেন, ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি হওয়ার সুবাদে এই ইউনিয়নে বাবলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কারও কোনো কথা বলার সাহস ছিল না। ১০ বছর এই গ্রামের দাদ বিল তিনি দখলে রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় লোকজন বাবলু বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর পর থেকে তাঁরা পলাতক।
মেহেরপুর সরকারি বালিকা ও বালক উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। বালিকা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ঠিকাদার বাবলু বিশ্বাস, বালক বিদ্যালয়টির ঠিকাদার সরফরাজ হোসেন। পাশাপাশি অবস্থিত বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেদের অভিযোগ, তাঁরা বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণের সামগ্রী রেখেছিলেন। বালক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ফজলুল হক বলেন, ‘একাডেমি ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সদ্য সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি আবদুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস। তাঁকে মাঠ পরিষ্কার রাখতে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে বলার ক্ষমতা আমাদের ছিল না।’
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৯ আগস্ট মেহেরপুর শহরের ক্যাশবপাড়ায় ফরহাদ হোসেনের ফুফাতো ভাই শাজাহান সিরাজের ভাড়া বাড়ি থেকে কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ সরকারি মালামাল জব্দ করে যৌথ বাহিনী। ফরহাদ হোসেনের পক্ষে শাজাহান সিরাজ বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। জব্দ মালামালের মধ্যে ছিল বিনা মূল্যে বিতরণের কোরআন শরিফ, কম্বল, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াসামগ্রী, সেলাই মেশিন, হুইলচেয়ার, চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন, পিপি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, অক্সিজেন সিলিন্ডার, শিক্ষার্থীদের টিফিন বক্স। এসব সামগ্রীর গায়ে লেখা রয়েছে ‘বিক্রয়ের জন্য নহে’।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাবলু বিশ্বাস সম্প্রতি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরহাদ হোসেন মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই আমি ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। ক্ষমতায় থাকলে অনেক অভিযোগ যুক্ত হয়। যারা অভিযোগ করে, তাদের হলফনামা ঘাটলে ব্যাপক দুর্নীতি পাওয়া যাবে।’
১০ বছরে আয় বেড়েছে অন্তত ১২ গুণ
ফরহাদ হোসেনের গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফরহাদ হোসেন কলেজে শিক্ষকতা করে বছরে আয় করতেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৪০ টাকা। ১০ বছর পর এখন তিনি কৃষি, ব্যবসা, শেয়ার ও মন্ত্রীর পারিশ্রমিক মিলিয়ে বছরে আয় করেন ৭৭ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ইসলামের নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি সোনা ছিল। এখন তাঁর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখে। এর মধ্যে নগদ আছে ৪৭ লাখ ও ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে ৪০ লাখ টাকা। যদিও কোনো হলফনামাতেই মোনালিসা ইসলামের আয়ের উৎসের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। ২০২৩ সালে ফরহাদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ ২ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে যা ছিল মাত্র ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৭ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ২০১৪ সালে কোনো জমি ছিল না। বর্তমানে তাঁর ২ বিঘা ৫ কাঠা কৃষিজমি রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত বছর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা যখন যৌথ পরিবার ছিলেন, তখন কৃষিজমি থেকে তাঁর নিজস্ব কোনো আয় ছিল না। পরিবারের সম্পত্তি বণ্টন হওয়ার পর কৃষিজমি হয়েছে। পাশাপাশি বেতন-ভাতা থেকে বছরে ৩০ লাখ টাকার সমপরিমাণ যোগ হচ্ছে।
মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক এই মন্ত্রী অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে কানাডায় বাড়ি তৈরি করেছেন। হঠাৎ সরকার পতন হলে তিনি বিদেশে যেতে পারেননি। তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রী কানাডায় অবস্থান করছেন বলে তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মেহেরপুরের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষ যখন পছন্দমাফিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পান না, ঠিক তখনই গণতন্ত্র বিলুপ্ত হতে থাকে। মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ হয়ে যায়। এমন একটি ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনেরা তাঁদের স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়ে লুটপাট শুরু করেন। ফরহাদ হোসেনের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটিই হয়েছে।