‘আগে এক ট্রাক গরু ঢাহায় (ঢাকায়) নিয়্যা গেলে খরচ হইতো ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। এহন মাত্র ৮ হাজার টাকায় ১৬ ডা গরু নিয়ে যাইতাছি। এতে গরু বেচে আঙগোরে (আমাদের) লাভের সম্ভাবনা আছে। নিরাপদে আমরা ঢাহায় (ঢাকায়) পৌঁছাইতে পারমু। আমি আগের বারও ট্রেনের ওয়াগন ভাড়া করে এভাবে রাজধানীতে গরু নিছিলাম। এবারও ট্রেনেই গরু নিয়ে যাইতাছি।’ জামালপুরের ইসলামপুর রেলস্টেশনে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেনের একটি ওয়াগনে গরু ওঠানোর সময় কথাগুলো বলছিলেন ব্যবসায়ী আকরাম আলী। রেলওয়ের এমন সেবা চালু থাকায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুটি ‘ক্যাটল স্পেশাল’ গতকাল বুধবার রাতে পৃথক সময়ে ইসলামপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর মাধ্যমে দুই ট্রেনের ৫০টি ওয়াগনের প্রতিটিতে ১৬টি করে মোট ৮০০টি গরু কম খরচে ঢাকায় নেওয়ার সুযোগ পান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
সড়কপথে নানা ধরনের ঝক্কিঝামেলা থাকেই। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি এড়িয়ে ট্রেনে করে কোরবানির গরু সহজেই রাজধানীতে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অন্য ব্যবসায়ীরা। উপজেলার উলিয়া থেকে আসা আরেক গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সড়কপথে গরু ঢাকায় নিতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি; অন্যদিকে খরচও বেশি। এ ছাড়া পথে পথে চাঁদা দিতে হতো। আর ট্রেনের মাধ্যমে এসব সমস্যা নাই। নিরাপদে আমরা গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে পারব।’
জয়নাল যোগ করেন, ‘অনেক সময় ট্রাকে নিতে গেলে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে যানজটের মধ্যেও আটকে থাকতে হতো। ট্রেনে এসব কোনো সমস্যা নাই। আমরা খুব ভালোভাবেই ট্রেনে গরু নিয়ে যেতে পারি।’
অনেক সময় ট্রাকে নিতে গেলে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে যানজটের মধ্যেও আটকে থাকতে হতো। ট্রেনে এসব কোনো সমস্যা নাই। আমরা খুব ভালোভাবেই ট্রেনে গরু নিয়ে যেতে পারি।স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন
ইসলামপুর রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ইসলামপুর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেনটি গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রাত ১০টার দিকে একই স্টেশন থেকে আরও ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে দ্বিতীয় ট্রেনটি ছেড়ে যায়। দুটি ট্রেনে মোট ৮০০টি গরু ঢাকায় গেছে। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় আরও একটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন ঢাকার পথে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর চাহিদা বেশি থাকায় দুই দিন ট্রেন সেবা চালু করা হয়েছে।
পশুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেনের পরিবর্তে ট্রাকে করে কোরবানির পশু ঢাকায় নিয়ে গেলে প্রতিটি গরু বা মহিষের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা বা তারও বেশি পরিবহন খরচ লাগে। ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকায় যেতে গরুপ্রতি মাত্র ৫০০ টাকা লাগছে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। ফলে তাঁরা বেশি লাভবান হবেন। একই সঙ্গে তুলনামূলক নিরাপদেও গরুগুলো পৌঁছাবে ঢাকায়।
পচাবহলা এলাকার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, সড়কপথের চেয়ে ট্রেনে গরু পরিবহনে অর্ধেক খরচ হয়। সবচেয়ে বড় কথা, একদম নিরাপদে ঢাকার হাটে পৌঁছানো যায়। এসব কারণে অঞ্চলটির গরু ব্যবসায়ীরা ট্রেনে গরু নিতে বেশি পছন্দ করেন।
কোরবানির পশু জামালপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে গেলে প্রতিটি গরু বা মহিষের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা বা তারও বেশি পরিবহন খরচ লাগে। ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকায় যেতে গরুপ্রতি মাত্র ৫০০ টাকা লাগছে।
ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ২০২০ সাল থেকে কম খরচে রাজধানীতে কোরবানির পশু পরিবহনের জন্য ‘ক্যাটল স্পেশাল’ নামের বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অঞ্চলটির ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই ক্যাটল ট্রেনে গরু পরিবহন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে জানান ইসলামপুরের স্টেশনমাস্টার শাহীন মিয়া। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ব্যবসায়ীদের আরও বেশি সাড়া পাওয়া গেছে। অনেক আগেই ব্যবসায়ীরা ওয়াগন ভাড়া করে ফেলেছেন।