কুমিল্লায় নির্যাতনের শিকার হাতি নিহারকলিকে গতকাল শনিবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের হাতিশালায় আনা হয়। এখানে এসেই ক্লান্ত হাতিটি গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় তার পরিচর্যা।
গতকাল সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, হাতিটির শরীরে পানি দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ পানি দেওয়ার পর হাতিটি বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে গোসল করতে থাকে। সাফারি পার্কের মাহুতরা মিলে হাতিটির শরীর ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিচ্ছিলেন। এরপর সেটি উঠে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই এক পাশ থেকে আরেক পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। এরপর অপর পাশেও পানি ঢেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালান মাহুতরা। পরিচর্যা শেষে হাতিটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি হাতিকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। বন বিভাগের লোকজন উদ্ধার অভিযানে নামেন। তাঁরা বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যান। গিয়ে দেখতে পান, দাউদকান্দির হাতিটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর হাতি নয়। এখানে নির্যাতনের শিকার যে হাতি পাওয়া যায়, এটি বয়স্ক ও কিছুটা অসুস্থ। হাতিটি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হতো। পরে হাতিটিকে উদ্ধার করে সাফারি পার্কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিকে বন বিভাগ জানতে পারে, ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়া মারধরের শিকার হাতির অবস্থান নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকায়। গত ৩০ আগস্ট বিকেলে সেখানে অভিযান চালায় বন বিভাগ। পরের দিন ৩১ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার অভিযানে ছিলেন বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি হাতি খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে আরও একটি হাতি। দুটি হাতি এখন সাফারি পার্কে আছে। হাতি উদ্ধারের পাশাপাশি মনিরুল ইসলাম (১৯) নামের একজন মাহুতকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে। উদ্ধার দুটি হাতি দিয়েই মালিকেরা চাঁদাবাজি করতেন।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, দুটি হাতিকে সাফারি পার্কে এনে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন পিরিয়ড শেষ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অন্য হাতির সঙ্গে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হবে।