গলায় ও ঘাড়ে নখের আঁচড় দেখে খুনিকে শনাক্তের দাবি পুলিশের

স্কুলছাত্রী হত্যার ঘটনায় আটক আবদুর রহিম। আজ শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রী (১৪) হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সাবেক গৃহশিক্ষক আবদুর রহিম ওরফে রনিকে (২৮) আটক করেছে পুলিশ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আটকের পর রহিমের গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় নখের আঁচড় পাওয়া যায়। এর সঙ্গে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত যাচাই করে পুলিশ বলছে, আবদুর রহিমই ওই স্কুলছাত্রীকে হত্যা করেছেন।

আজ শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আবদুর রহিমকে আটক ও ঘটনার পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে ওই হত্যকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ওই ছাত্রী একা ছিল। তার মা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ঘটনাটি জানার পর প্রথমে থানা-পুলিশ, পরে তিনি নিজেই ঘটনাস্থলে যান। তখন ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেছিলেন, একই এলাকার মো. সাঈদ (২০) ও এক কিশোর (১৪) তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এর আগেও অভিযোগ করেছেন, কিন্তু কোনো বিচার পাননি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়।

নোয়াখালীতে স্কুলছাত্রী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম

পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে তাঁরা গোপন তথ্য পান ওই ছাত্রীকে একসময় আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি প্রাইভেট পড়াতেন। কিন্তু হঠাৎ ওই ছাত্রী তাঁর কাছে পড়া বন্ধ করে অন্য শিক্ষকের কাছে পড়া শুরু করে। আবদুর রহিম একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। আবদুর রহিমের গলা ও ঘাড়ে সদ্য লাগা আঁচড়ের দাগ দেখা গেছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে আটক করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আটকের পর আবদুর রহিমকে পরীক্ষা করে গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় আঁচড়ের দাগ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক আঁচড়টি সদ্য এবং নখের বলে জানান। তখন আঁচড় কীভাবে লেগেছে জিজ্ঞাসা করলে দুই শ্যালিকা আঁচড় দিয়েছেন বলে দাবি করেন রহিম। কিন্তু যাছাই করে ওই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর রহিম আঁচড়ের দাগের বিষয়ে আর কোনো জবাব দেননি। এতে প্রাথমিকভাবে আবদুর রহিমই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলছাত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আবদুর রহিম প্রধান অভিযুক্ত। বাকি দুজন উত্ত্যক্তের ঘটনায় অভিযুক্ত। আবদুর রহিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি না হলে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির করা হবে। এ ছাড়া অন্য দুজনের মধ্যে সাঈদকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আর কিশোরকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে ফিরে তিনতলা ভবনের নিচতলার বাসার দরজা তালা ঝুলতে দেখেন ওই ছাত্রীর মা। তাঁর সঙ্গে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখেন, কক্ষের থাকা ওয়ার্ডরোবের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মেয়েকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পাননি। ভেতরের কক্ষের দরজা অটোলক করা। তিনি তখন ঘরের বাইরে এসে জানালার কাচ ভেঙে দেখেন, খাটের ওপর তাঁর মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

ওই ছাত্রীর মায়ের চিৎকারে আশপাশের মানুষ আসেন। পরে তাঁদের সহযোগিতায় দরজার লক ভেঙে ভেতরে মেয়ের গলাকাটা অর্ধনগ্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর স্থানীয়ভাবে বিষয়টি থানা-পুলিশকে অবহিত করা হলে পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। জেলা পুলিশ ছাড়াও পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হত্যার আগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ওই ছাত্রীর বাবা মারা যান ২০১২ সালে। দুই বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। বড় বোন শরীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করেন।