১. ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ৬ জন। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের।
২. কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার পাশাপাশি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা।
বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় একতরফা ভোট ঠেকাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। কাগজে-কলমে তাই কুমিল্লায় মেয়র পদে উপনির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয়। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। তাঁদের পাশাপাশি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতাও প্রার্থী হয়েছেন।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের চার নেতা। দলটির আরেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বাছাইয়ে তা বাতিল হয়। আওয়ামী লীগের বাইরে এখানে জাতীয় পার্টিরও প্রার্থী আছে। ময়মনসিংহে মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।
আগামী ৯ মার্চ এই দুই সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো নির্দলীয়ই হতো। সিটি করপোরেশন আইন সংশোধনের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে ভোট করার বিধান যুক্ত হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের দাবি, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতাতে আমিন উর রশিদ তাঁর শ্যালক নিজামকে প্রার্থী করেন। এবারও একই অবস্থা। এবারও শ্যালককে প্রার্থী করিয়েছেন আমিন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে দুই নেতা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান (তানিম) ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার। তাহসীন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত যে দুজন প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা হলেন কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক (সাক্কু) ও মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (কায়সার)। মনিরুল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর নিজাম কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তাঁরা দুজন প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। এখনো তাঁরা বহিষ্কৃত। তবে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকে এই নির্বাচনে তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন।
আগামী ৯ মার্চ এই দুই সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, যে দুজন প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত। দলের নেতা-কর্মীরা বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে এটা তাঁদের ব্যাপার। বিএনপি এই নির্বাচনে নেই।
দলীয় সূত্র বলছে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে দুটি ধারা। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম তাঁর শ্যালক। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মো. মনিরুল হক। তবে তাঁর অনুসারীদের বেশির ভাগ দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই। ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নিজামের সঙ্গে ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতা-কর্মী। আর মনিরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। নির্বাচন ঘিরে এই দুই পক্ষের বিরোধ বাড়ছে।
২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হকের কাছে হেরে যান মনিরুল হক। তিনি পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। আর নিজাম পেয়েছিলেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের দাবি, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতাতে আমিন উর রশিদ তাঁর শ্যালক নিজামকে প্রার্থী করেন। এবারও একই অবস্থা। এবারও শ্যালককে প্রার্থী করিয়েছেন আমিন।
কুমিল্লা সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছরের মাথায় গত ১৩ ডিসেম্বর মারা যান আরফানুল। তাঁর মৃত্যুতে আবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে।
তবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ২০২২ সালে নির্বাচন করেনি। এবারও দল নির্বাচনে নেই। নিজাম তাঁর আত্মীয় হলেও তিনি নিজে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। নেতা-কর্মীরা কারও পক্ষে থাকলে সেটি তাঁদের বিষয়।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে কাউকে প্রার্থী করা হলেও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তাহসীন বাহারকে সমর্থন দেয় এবং দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। তাহসীন বাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সভা করে আমাকে প্রার্থী করেছে।’
তবে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে কাউকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বলার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। এই নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, সবাই স্বতন্ত্র। দলীয় শৃঙ্খলা মানলে কাউকে একক প্রার্থী করা যায় না।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত আফজাল খানের পরিবারের প্রভাব রয়েছে। কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৭ সালে মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন, তবে ভোটে মনিরুলের কাছে হেরে যান। এবারের নির্বাচনে খান পরিবারের সমর্থন নূর উর রহমান পাবেন, এমন আলোচনা আছে।
কুমিল্লা সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছরের মাথায় গত ১৩ ডিসেম্বর মারা যান আরফানুল। তাঁর মৃত্যুতে আবার মেয়র পদে ভোট হচ্ছে।
হয়তো সিটি নির্বাচনের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই সবাইকে ডেকে বিভক্তি ভুলিয়ে দেবেন।ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী আজাদ জাহান
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী আছেন ছয়জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের চার নেতা। তাঁরা হলেন বর্তমান মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা মো. সাদেকুল হক খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফারামার্জ আল নূর।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম ফেরদৌসও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছেন। এখানে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে মো. রেজাউল হক নামে আরও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীরা বিভিক্ত হয়ে পড়ছেন। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মহানগরের সভাপতি ইকরামুল হকের পক্ষে রয়েছেন। অন্যদিকে আরেক প্রার্থী এহতেশামুল আলমের পক্ষে আছেন জেলা কমিটির সদস্য কাজী আজাদ জাহান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিনও এই বিভক্তি চোখে পড়ে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভিক্ত হবেই। তবে এটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত মেনেই তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে নির্বাচনের পর হয়তো কেন্দ্র থেকে বিভক্তি নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি তৈরি হয়েছিল। এখন সিটি নির্বাচন সামনে রেখে তা আবার প্রকাশ্যে এসেছে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী আজাদ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হয়তো সিটি নির্বাচনের পর দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই সবাইকে ডেকে বিভক্তি ভুলিয়ে দেবেন।’
কুমিল্লায় বিএনপির সাবেক দুই নেতা প্রার্থী হলেও ময়মনসিংহে দলটির সাবেক বা বর্তমান কোনো নেতা প্রার্থী হননি। ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, সাজানো নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে আসছে। তাঁদের মনোযোগ সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে।