সেতুর টোল প্লাজায় মারধর

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সংশোধিত অভিযোগ, এবার তদন্তের কথা বলল পুলিশ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে টোলের টাকা চাওয়ায় কর্মচারীদের মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা
ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় সেতুর টোল আদায়কে কেন্দ্র করে কর্মচারীদের হত্যা, অপহরণচেষ্টাসহ মারধরের অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেতুর ইজারাদার। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ইজাদারের পক্ষে ব্যবস্থাপক সামসুজ্জোহা বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে কুমারখালী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা এজাহারের কপি পেয়েছি। মামলা হয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

এর আগে গত শুক্রবার রাতে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন ইজারাদার। সেই অভিযোগ ‘অসম্পূর্ণ’ দাবি করে ফেরত দিয়েছিল পুলিশ। তখন ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেছিলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি অসম্পূর্ণ ছিল। সেটা সংশোধন করে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা আর আসেননি।’

গত শুক্রবার উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে সৈয়দ মাস উদ রুমী সেতুর টোলের টাকা চাওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ ওঠে। এতে অন্তত সেতুর টোল আদায়কারী ছয় কর্মচারী আহত হন। বেলা ১১টার দিকে সেতুটির পশ্চিম প্রান্তের টোল প্লাজায় এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের হামলার পর কর্মচারীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে ছাত্রলীগের ছয়-সাতজন কর্মী আহত হন এবং তাঁদের অন্তত তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

সেতুর ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে কুমারখালী থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগে কিছু ভুল আছে জানিয়ে সেগুলো সংশোধন করতে বলে পুলিশ। একই সঙ্গে শনিবার পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে বলে জানায়। কিন্তু পুলিশ কোনো যোগাযোগ করেনি। এরপর গতকাল অভিযোগ সংশোধন করে থানায় জমা দেন ইজাদারের ব্যবস্থাপক।

ওই অভিযোগে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলম, কুমারখালী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পলাশ। এ ছাড়া মো. সম্রাট, সাকিব, আহম্মেদ ও আকাশের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সামসুজ্জোহাসহ সাতজন মিলে সেতুর টোল আদায় করছিলেন। তখন ৫০-৬০টি মোটরসাইকেলযোগে অজ্ঞাতপরিচয় ১০০-১১০ জন কুষ্টিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। টোল প্লাজার কাছাকাছি এলে শাকিল নামের একজন কর্মচারী টোল দেওয়ার জন্য তাঁদের সিগন্যাল দেন। এ সময় আসামিরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল চালিয়ে ধাক্কা দিয়ে টোল প্লাজা অতিক্রমের চেষ্টা করেন। এ সময় টোল দেওয়ার কথা বললে শাকিলকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে অপহরণের চেষ্টা করেন রাশেদ আলম। বাধা দিলে আসামিরা লাঠিসোঁটা নিয়ে কর্মচারীদের সবাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে আরিফুল ইসলাম নামের একজন টোল প্লাজায় রক্ষিত টোল আদায়ের নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা চুরি করেন, যা সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান। এরপর তাঁরা হত্যার হুমকি দিয়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে যান। ঘটনাটি টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের গঠন করা তদন্ত কমিটির আগামীকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা আছে। গতকাল থেকে তাঁরা তদন্ত করছেন। সুপারিশসহ জেলা শাখার দপ্তর সেলে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।