আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

যে কারণে দেড় বছরেও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তিন সদস্যের আংশিক কমিটি গঠিত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এরপর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

আংশিক কমিটির পদে থাকা নেতাদের দাবি, তাঁরা প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই ৭৫ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর। জেলা শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি সম্মেলনে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী এবং সহসভাপতি হিসেবে শিহাব উদ্দিনের নাম ঘোষণা দেন। সম্মেলনের পর ১১ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খানের নাম ঘোষণা করা হয়।

তিন সদস্যের এই আংশিক কমিটি কার্যক্রম শুরুর ছয় মাসের মাথায় ৭৫ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবিত তালিকা প্রস্তুত করে দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে জমা দেন। এরপর ওই কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। ওই সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শে প্রস্তাবিত কমিটিতে কিছু পরিবর্তনও আনা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন পায়নি।

দলের নেতা-কর্মীরা জানান, এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি গঠিত হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে দলে নানা সংকট তৈরি হয়। তখন দলের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের দুই প্রার্থী মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ও সহিদ উল্যাহ খানের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। পরে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব পাঠালেও তাতে সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরীও এ বিষয়ে কেন্দ্রে নালিশ করেন। এ পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে গঠন করা আংশিক কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের ৮৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বেই ২০২২ সালে সম্মেলন হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের আগের বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। এসব নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলে অগোছালো অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দিবস ও দলীয় কর্মসূচি পালনের মধ্যেই দলের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ, দীর্ঘ সময় ধরে নতুন কর্মী-সমর্থক বাড়েনি। পদ-পদবি না থাকলেও সবাই নিজেকে নেতা পরিচয় দিচ্ছেন, সাংগঠনিক নিয়মকানুন মানছেন না। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে দলের কর্মকাণ্ডে গতি আসত। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও দলের সব কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবেই চলছে। পরীক্ষিত লোকের কোনো পদ লাগে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি আশা করি শিগগিরই অনুমোদন হবে। বিষয়টি নিয়ে দলের কর্মকাণ্ডে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কমিটি করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’