সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনী সভায় হুমকি দেওয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে জামালপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গণে
সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনী সভায় হুমকি দেওয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে জামালপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গণে

এজেন্ট দিলে হাত ভেঙে দিতে চাওয়া ২ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে ঢুকলে হাত ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করার হুমকি দেওয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে জামালপুর শহরের পাথালিয়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা করেন।

বেলা আড়াইটায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

গ্রেপ্তার দুই নেতার নাম সাইদুল হাসান ও খন্দকার মোতাহার হোসেন ওরফে জয়। সাইদুল সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক এবং পিংনা সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। খন্দকার মোতাহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলামের সমর্থক।

সংবাদ সম্মেলনে রিটার্নিং কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার বলেন, পিংনা ইউপির সামনে একটি সভায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তাঁর দুজন কর্মী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের বাধা এবং হাত ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করাসহ নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যার একটি ভিডিও ক্লিপ তাঁর নজরে এসেছে এবং বিভিন্ন পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩–এর বিভিন্ন বিধান অনুযায়ী যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ওই ঘটনায় প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হুমকিদাতা দুজনের বিরুদ্ধে গতকাল সরিষাবাড়ী থানায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের দুজনকে আজ গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই প্রার্থীও কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন, যা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান।

গত বুধবার রাতে পিংনা ইউপির আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলামের একটি সভায় গ্রেপ্তার দুই নেতা বক্তব্য দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে দুই নেতার হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘এজেন্ট দিলে হাত ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

ভিডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুলকে বলতে শোনা যায়, ‘...আমাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হানাহানি করার চেষ্টা করবেন না। যদি করেন, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, তাঁদের দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। যাঁদের দাঁত নাই, তাঁদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে। সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। পিংনাতে আমরা উন্নয়ন করতেছি। এই উন্নয়নে যাঁরা বাধা দিতে আসবেন, তাঁদের আমরা প্রতিহত করব। আমাদের বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আগামী ৮ মের নির্বাচনে অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট আমরা দিতে দেব না। আমরা রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’

একই ভিডিওতে সাইদুলের বক্তব্যের পর খন্দকার মোতাহারকে বলতে শোনা যায়, ‘সাইদুল স্যার যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরাও তাঁর ঘোষণার সঙ্গে একমত। অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তাঁর হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করব।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, সরিষাবাড়ী থানায় হওয়া মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের দুজনকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।