খুলনা শহর এবং এর আশপাশের উপজেলায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব অনেকটা কাটলেও আজ দুপুরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করছে। খুলনা অঞ্চলে দানার প্রভাব অনেকটা কেটেছে। তবে দুপুরে দানার প্রভাবের শেষ ধাক্কা হিসেবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরব, রূপসা ও কাজী বাছার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক।
তবে দানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের উপজেলায় মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগমনী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশিত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আইলা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এর পর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের পরান কাঁপে।’
নিশিত কুমার মণ্ডল আরও বলেন, ‘গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুতারখালী নদী। নদীর ভাঙনে আমাদের গ্রামের তেলিখালী এলাকায় ওয়াপদা রাস্তা প্রায় বিলীন হতে চলেছে। যেকোনো জলোচ্ছ্বাসে একেবারে ভেঙে যাবে এ রাস্তা। তাই ঝড়ের কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবু এখন যে উঁচু জোয়ার হচ্ছে, তাতে ভয় আমাদের কাটেনি। এলাকার একমাত্র আমন ফসল ঘরে তুলতে পারব কি না, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য খুলনার ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অনেকটা কমে এলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবার কয়েক দফায় বৃষ্টি ঝরে। আজ সকাল থেকে রোদ ওঠায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
উপকূলে স্বস্তি
বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূল পাড়ি দেওয়ায় কয়রা উপজেলার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গত দুই দিন আতঙ্কে ছিল এ অঞ্চলের লাখো মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের তুলনায় আজ শুক্রবার ভোরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়নি। এতে স্বস্তিতে আছেন কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদ-নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। গতকাল জোয়ারের তোড়ে ধসে যাওয়া কয়রার দশালিয়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দানার প্রভাব কেটে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
আজ সকালে কয়রার কপোতাক্ষ নদের পারের মদিনাবাদ এলাকায় গিয়ে বহু মানুষের ভিড় দেখা যায়। ভোরের জোয়ারে নদের পানি কতটুকু বেড়েছিল সেটি দেখতে এসেছেন তাঁরা। সেখানে বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতকাল সারা রাত একফোঁটাও ঘুম হয়নি। কখন না জানি বাঁধ ভেঙে যায়, এই চিন্তা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে যায়নি। সকালে আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টি নেই, ঝড় নেই। স্বস্তি পাচ্ছি।’
কয়রা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাসানুল বান্না জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাবে দুই দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কয়রায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে। আপাতত শঙ্কামুক্ত বলা যায়।