নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের আলুপট্টির মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধনে সংসদ সদস্যের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
‘সচেতন বাগমারাবাসী’র ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচি স্থায়ী ছিল ২০ মিনিট। মানববন্ধনে সংসদ সদস্য এনামুল হকের ছবির ওপরে লাল কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়া একাধিক পোস্টার দেখা যায়। সর্বশেষ বাগমারার আউচপাড়া ইউনিয়নের এক নারীর সঙ্গে সংসদ সদস্য এনামুল হকের আপত্তিকর কথাবার্তা-সংবলিত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
বাগমারার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এম এনামুল হক মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সংসদ সদস্য এনামুল হকের অডিও-ভিডিও ফাঁসের মাধ্যমে বাগমারাবাসী, জাতীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমরা এই এমপির অপসারণ চাই। তিনি বারবার বাগমারার মানুষকে আহত করেছেন। আমরা অবিলম্বে এই অশ্লীল ভিডিও ফাঁসকারী এমপির অপসারণ চাই।’
আউচপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, বাগমারার নারীরা সংসদ সদস্য এনামুলের কাছে নিরাপদ নন। দুই দিন আগে তাঁর অডিও-ভিডিও ফাঁস হয়েছে, তা নিয়ে তিনি এলাকাবাসীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁরা নেতার কাছে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। তিনি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আওয়ামী লীগকে বঞ্চিত করেছেন। জামায়াত–বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আর এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দাবি রাখেন না।
জেলা মৎস্যজীবী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু রায়হান বলেন, ‘এনামুল হক বাগমারার নারী সমাজকে এতটাই নিচে নামিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। এখন আমাদের একটাই দাবি—হটাও এনামুল, বাঁচাও বাগমারা। বাগমারার নারীদের রক্ষা করতে হলে এনামুলকে হটাতে হবে।’
সংসদ সদস্য এনামুল হকের বিরুদ্ধে চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ-সংবলিত এক নারীর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই নারী চাকরি ও বিয়ের প্রলোভনে সংসদ সদস্যের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা জানান। অবশ্য এক দিন পরই ওই নারীর আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম ওরফে সান্টু তাঁকে দিয়ে ভিডিওটি করিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এনামুল হক যাতে মনোনয়ন না পান, সে জন্য তিনি এটা করেছেন।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে তিনি চেনেন না। অন্যদিকে এ ব্যাপারে জাকিরুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য এনামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
গত সোমবার সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না, বাগমারায় নৌকার মাঝি এনামুল হক। যাঁরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ধান্দা করছেন, তাঁদের সমীচীন জবাব দেওয়া হবে।’
এর আগে গত এপ্রিল মাসে সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালের মে মাসে রাজশাহীর এক নারী ফেসবুকে এনামুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি প্রকাশ করেন। তিনি সেদিন বিয়ে নিয়ে একাধিক স্ট্যাটাস দেন। ওই সময় এ প্রতিবেদককে ওই নারী ফোন করে নিজেকে এনামুল হকের স্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন।
এরপর গত ১ জুন ওই নারী ফেসবুকে লেখেন, ‘এমপি সাহেবের ভক্তরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়া হবে—এমন কথা বলছেন। আমি গণমাধ্যমে এসেছি। তাই আজ উনি আমাকে ডিভোর্স দেবেন। সব মিলিয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। বিচার চাইব।’ ওই সময় এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বিয়ে করেছিলাম ২০১৮ সালে। গত ২৩ এপ্রিল তালাক দিয়েছি। তাঁর কিছু বলার থাকলে আদালতে গিয়ে বলুক। তা না করে এসব সাংবাদিকদের বলে বিরক্ত করার কী দরকার।’
এদিকে বাগমারায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত ‘শান্তি’ সমাবেশে সংসদ সদস্য এনামুল হককে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় সংসদ সদস্য বিরোধী ফোরস্টার গ্রুপের সংগঠন তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হয়ে ভবানীগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য পি এম সফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, জাকিরুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সমালোচনা করেন এবং সংসদ সদস্য এনামুলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন।