চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ। আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে
চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ। আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে

জাতীয় গণসংগীত উৎসব কাল, ৬০০ শিল্পীর অংশগ্রহণ

ছয় শর বেশি শিল্পীর অংশগ্রহণে আগামীকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসব। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গণসংগীতশিল্পী ও সংগঠন এ উৎসবে অংশ নেবে।

ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। ‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’—এই স্লোগান নিয়ে আয়োজিত উৎসব উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘জাতীয় গণসংগীত উৎসব আগের তিনবার ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে। সবকিছু ঢাকায় না করে দেশের অন্যান্য স্থানে করলে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে। ঢাকার বাইরে এই প্রথম জাতীয় গণসংগীত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এ জন্য আমরা চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছি। উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীত ও উদ্বোধনী গণসংগীত পরিবেশন করবেন ১৩৫ জন শিল্পী।’

তিনি বলেন, ‘যত দিন শ্রেণিবৈষম্য থাকবে, সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না, তত দিন গণসংগীতের প্রয়োজনীয়তা থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কথা ছিল স্বাধীন দেশে সব শ্রেণি-পেশার, জাতি ও ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাঁচবে। ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। শ্রেণিবৈষম্য থাকবে না। সে লক্ষ্যে বাহাত্তরের সংবিধানে চার মূলনীতি গ্রহণ করা হয়। পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর সেই যাত্রা থেমে গিয়েছিল। তারপর বহু কঠিন পথ আমাদের পার হতে হয়েছে এবং হচ্ছে। যে রাষ্ট্রে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে বিধিনিষেধ মানতে হয়, সেখানে বাংলা, বাঙালি, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব? সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বলেন, উৎসবে সারা দেশের ৩২টি দল ও একক বরেণ্য গণসংগীতশিল্পীরা অংশ নেবেন। তিন দিনে উৎসবে সারা দেশের প্রায় ৬০০ শিল্পী একত্র হবেন।

আগামীকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করবেন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক অনুপম সেন। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ প্রমুখ।

আগামী শনিবার সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারে মূল বিষয় ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক।

আগামীকাল উৎসবের সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজির গান পরিবেশন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করবে নজরুলসংগীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করবেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু।

এ ছাড়া তিন দিনে সংগীত পরিবেশন করবেন সাতক্ষীরার শিল্পী রোজ বাবু, পাবনার প্রলয় চাকী, সিলেটের গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার ফকির শাহাবুদ্দীন, সুরাইয়া পারভীন ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সুজিত চক্রবর্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র। নেত্রকোনার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান পরিবেশন করবে চাঁদপুরের দল সপ্তসুর, মুকুন্দ দাসের গান পরিবেশন করবে মুন্সিগঞ্জের দল অন্বেষণ, মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল স্বভূমি লেখক-শিল্পী কেন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষায় গণমানুষের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম এবং অশোক সেনগুপ্তের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী।

একক সংগীত পরিবেশন করবেন ময়মনসিংহের শিল্পী দিল বাহার খান, মুন্সিগঞ্জের শিশির রহমান, ঢাকার অলক দাশগুপ্ত, চট্টগ্রামের কল্পনা লালা, জয়ন্তী লালা ও শ্রেয়সী রায়। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের প্রাপন একাডেমি।

উৎসব কমিটির আহ্বায়ক আবু ফারাহ পলাশের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয়ক পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন শিল্পী আরিফ রহমান, উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শিল্পী শ্রেয়সী রায়, পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলক দাশগুপ্ত ও হাবিবুল আলম।