কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন ৭৮টি ফ্ল্যাটে। কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য রেখেছেন নিজের হোটেল। কয়েক দিন ধরেই তিন বেলা নেতা-কর্মীদের খাবারের আয়োজন করছেন। পুরো নগরে তাঁর নামে শত শত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। কুমিল্লা টাউন হল মাঠের চারপাশ তাঁর ছবিতে সয়লাব।
এই ব্যক্তি হচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু)। যদিও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির গণসমাবেশের আগে নিজের কর্মকাণ্ড দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন মনিরুল হক। দলে ফেরার জন্য হঠাৎ তিনি তৎপর হয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েই মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন মনিরুল হক।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরুল হক। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেন তিনি। ফলে গত ১৯ মে তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দল। একই সঙ্গে দলের নেতা–কর্মীদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারণ করা হয়। গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মনিরুল হক আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এরপর তিনি হঠাৎ দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হঠে ওঠেন। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করেন। কুমিল্লায় বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তিনি ১০ নভেম্বর থেকে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে ওঠেন।
মনিরুলের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে মনিরুল হক গণসমাবেশ সফল করতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করে আসছেন। তাঁর কুমিল্লা নগরের নানুয়াদিঘির পাড়ের বাসভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। বাসার পাশের ১৪ তলা ভবনের ৭৮টি ফ্ল্যাটে দলীয় নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁদের গত বুধবার রাত থেকে খাওয়াচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১০ হাজার নেতা-কর্মী খেয়েছেন। সকালে খিচুড়ি, দুপুরে মুরগী, রাতে ডিম, ভর্তা ও ডাল খাওয়ানো হচ্ছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে নেতা–কর্মীদের নিয়ে ভাত খেয়ে সভাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। পুরো নগরে তাঁর নামে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। কুমিল্লা সার্কিট হাউস এলাকায় তাঁর একটি বিলবোর্ড ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, মনিরুল হকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। তিনি নিজ থেকে এসব কাজ করছেন।
জানতে চাইলে রাতে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘দল আমাকে বহিস্কার করলেও আমি বিএনপির সঙ্গে আছি। দলের মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যান বুলু ভাই (বরকত উল্লাহ) আমাকে কাজ করতে বলেছেন। তাই আমি কাজ করছি। এই গণসমাবেশ উপলক্ষে দলীয় নেতা–কর্মীদের জন্য ২৫ লাখ টাকার ওপর বরাদ্দ রেখেছি। এখন মনে হয় আরও বেশি খরচ হবে। বুধবার রাত থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’
এখন দলের কর্মী হয়ে আছেন উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমাদের পরিবার ও আমি জড়িত। কুমিল্লায় আদি বিএনপি আমরা। গণসমাবেশে দুই হাজার লোক নিয়ে টাউন হল মাঠে থাকব। বাকিরা সড়কে থাকবে। আমি মঞ্চে যাব না। উঠব না। বললেও যাব না। দলের কর্মী হয়ে আছি এখন। বিএনপিকে সংগঠিত করে এগিয়ে নেওয়াই আমার কাজ। দলে আমাকে ফিরিয়ে নেবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘সাক্কুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি। তবে তিনি দলের জন্য কাজ করছেন।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে মনিরুল হক নিজ দলের নেতার চেয়ে অন্য দলের নেতাকে বেশি প্রাধান্য দিতেন বলে আলোচনা আছে। যে কারণে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘মনিরুল অতীতের অবস্থান থেকে সরে এসে বিএনপির মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টায় এই গণসমাবেশে তাঁর সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করছেন। দলে ফেরার জন্যই তাঁর এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।’