মাগুরায় দুই বছর আগে হামলার ঘটনায় এখন মামলা করছেন বিএনপির নেতারা। ২০২২–২৩ সালের দুটি হামলার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেছেন যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতা। মামলায় মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
একটি মামলার বাদী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিলন শরীফ। দুই বছর পর মামলা করার বিষয়ে বলেন, ‘আমি বিএনপি করি বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আমার ওপর হামলা করেন। আমার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। তখন ভয়ে মামলা করতে পারিনি। তাই এখন মামলা করেছি।’
সদর থানা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও বোমা বিস্ফোরণ করে জনমনে আতঙ্ক তৈরির অভিযোগে একটি মামলা করেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. মারুফ হোসেন (৪৩)। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাখারুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফজলুর রহমানসহ ৫৩ জনকে আসামি করা হয়। সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন মারুফ। সেটা দেখে ক্ষিপ্ত হন সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান। তিনি তাঁর অনুসারীদের মারুফের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এরপর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ফটকের পাশে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর ওপর হামলা হয়। এ সময় বোমা বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক ছড়িয়ে চাপাতি, রামদা দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান হামলাকারী ব্যক্তিরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে পারলেও সংসদ সদস্যের কারণে তখন মামলা করতে পারেননি বলে এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।
সদর থানা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্টের একটি ঘটনা উল্লেখ করে ৩ সেপ্টেম্বর মামলা করেন যুবদল নেতা মিলন শরীফ। এজাহারে তিনি নিজেকে সংবাদকর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হামলা, মোটরসাইকেলে আগুন ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে করা মামলায় জেলা যুবলীগের নেতা মীর রাশেদুল ইসলাম, আহ্বায়ক ফজলুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৬ জন নেতা-কর্মীর নাম আছে। অজ্ঞানামা আসামি ১৫০।
বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট সদর উপজেলা পরিষদের পাশে তাঁদের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। দুপুরের পর সেখানে হামলা করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তখন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় উল্টো বিএনপির নেতাদের আসামি করে থানায় মামলা করেন জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা।
জেলা যুবদলের সভাপতি আইনজীবী ওয়াসিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন আমাদের সমাবেশে হামলার পাশাপাশি দলীয় নেতাদের বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আবার আমাদের নামেই মামলা দিয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে জেল খাটানো হয়। এখন নির্যাতনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন মামলা করতেই পারেন। সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা দুটি রেকর্ড করা হয়েছে। একজন ভুক্তভোগী যেকোনো সময়ই মামলা করতে পারেন। এখন পুলিশ তদন্ত করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে।’