কুষ্টিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা-মারধরের অভিযোগ, পরে নাশকতার মামলা

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র
কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় পুলিশের বিরুদ্ধে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে গভীর রাতে অভিযান চালানোর সময় ভাঙচুর ও পরিবারের দুই নারী সদস্যকে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। পরদিন সকালে ওই বিএনপি নেতাসহ তাঁর পাঁচ ভাইকে নাশকতার মামলার আসামি করে মামলা করে পুলিশ। তবে মামলার সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। যদিও পুলিশ দাবি করেছে, সাক্ষীরা সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন।

গত রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের বাড়িতে এসব ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সোমবার সকালে খোকসা থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় শফিকুল ও তাঁর ৫ ভাইয়ের নামসহ ২৯ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৭৫ জনকে। এজাহারে খোকসা থানাপাড়ার বাসিন্দা খোকসা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আহম্মেদকে ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় বিশেষ অভিযানে যায় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, গোপগ্রাম সড়কের একটি সেতু ও সড়ক ভাঙচুর করা হচ্ছে। সেখানে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় এবং একটি হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ সেখান থেকে হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫০), শিমুলিয়া গ্রামের জাফর ইকবাল (৫৫) ও শাওন রেজাকে (২২) আটক করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বাঁশের লাঠি, তিনটি ককটেল ও বড় হাতুড়ি জব্দ করে।

পরদিন সকাল সোয়া ৭টায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ। মামলার আসামিদের অধিকাংশই বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী। মামলার তিনজন সাক্ষীর মধ্যে দুজন হলেন হযরত আলী ও কৃষ্ণ কুমার বিশ্বাস। এর মধ্যে হযরত আলী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) চালক। আর কৃষ্ণ কুমার গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য।

কৃষ্ণ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গোপগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে মোটরসাইকেলে পুলিশ এসে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। এরপর কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কিছুই জানি না।’

আরেক সাক্ষী হযরত আলী বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মাসিক ডিউটি হিসেবে ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পে যান। তাঁর ইজিবাইকে পুলিশ রাতে বের হয়। অভিযানের সময় তিনি সড়কে গাড়ির ভেতরে ছিলেন। কিছু শোরগোল শুনতে পান। তবে কোনো ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাননি।

বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ

মামলার ১৭ নম্বর আসামি গোপগ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, রাত দেড়টার দিকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁর বাড়িতে আসেন। তাঁদের মধ্যে একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) চিনতে পারেন তিনি। তাঁকে পোশাক নিয়ে গাড়িতে উঠতে বলেন। সেই গাড়িতে কয়েকজনকে লাঠি নিয়ে বসে থাকতে দেখেন। তবে তাঁদের শরীরে পুলিশের পোশাক ছিল না। ওই গাড়িতে তিনি উঠতে চাননি। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। শোরগোল হলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি সেখান থেকে চলে যান। এরপর রাতে আর বাড়িতে ফেরেননি। পরে জানতে পারেন, পুলিশ বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। এ সময় তাঁর এক ভাইয়ের স্ত্রী মুঠোফোনে ভিডিও করলে তাঁর হাতে আঘাত করে পুলিশ। আঘাতে ফোন পড়ে যায়। সেটি নিয়ে যায়। আরেক ভাইয়ের স্ত্রীকেও শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়।

শফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরে জানতে পারেন, তাঁকেসহ তাঁর পাঁচ ভাইকে নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। বাড়িতে শুধু নারী ও শিশুরা আছে। তাঁরা জামিনের চেষ্টা করছেন।

খোকসা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার যেসব নেতা ঢাকার সমাবেশে গিয়েছিলেন, তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। রোববার বিকেল থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। গভীর রাতে শফিকুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। নাশকতার মামলায় তাঁকেও আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী খোকসা থানার এসআই আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে গ্রেপ্তার আসামিদের বিষয়ে ছাড়া কথা বলতে চাননি। মামলা ও বাকি আসামিদের বিষয়ে তিনি ওসি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

বিএনপির নেতা শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর এবং নারীদের আঘাতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওইভাবে নাম বললে আমি চিনব না। আমরা নাশকতা ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। তিনজনকে আটক করা হয়। এজাহারে কতজন আসামি, সেটা দেখতে হবে। ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলতে পারবেন।’ সাক্ষীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাক্ষীরা সবাই সেখানে ছিলেন। তাঁরা স্বাক্ষরও করেছেন। এ বিষয়ে আপনি (প্রতিবেদক) সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন।’

শফিকুলের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে পুলিশের এই এসআই বলেন, ‘ওটা আমি বলতে পারব না। আমরা কারও বাসায় ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করি না। আমরা রাষ্ট্রের চাকরি করি। রাষ্ট্রের কারও ক্ষতি হোক, কখনোই চাইব না। এ ধরনের কোনো বিষয়ে আমাদের জানা নেই।’