তালাবদ্ধ এমআরআই যন্ত্রের কক্ষ। গত বুধবার মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে
তালাবদ্ধ এমআরআই যন্ত্রের কক্ষ। গত বুধবার মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে

মানিকগঞ্জের দুটি হাসপাতালে পড়ে আছে ৩৬ কোটি টাকার দুটি এমআরআই যন্ত্র

যন্ত্র দুটি কাজে না লাগায় রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে ঢাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে এমআরআই পরীক্ষা করতে হচ্ছে।

প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্র স্থাপন করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হলে উত্তপ্ত হয়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি চালু করা যায়নি।

পড়ে আছে জেলা সদরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্রটিও। এটিও প্রায় ১৮ কোটি টাকায় কেনা। দক্ষ জনবলের সংকটে যন্ত্রটি চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতাল দুটির গুরুত্বপূর্ণ ওই দুটি যন্ত্র বন্ধ থাকায় রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের বাড়তি টাকা খরচ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এমআরআই পরীক্ষা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার এ থেকে রাজস্বও হারাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে যন্ত্রটি সরবরাহ করে এসটিএমএস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরের বছর যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। ওই বছরের ৩ মার্চ ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের একটি কারিগরি দল এমআরআই যন্ত্রটি পর্যবেক্ষণ করে। তার পরের বছর ২০২২ সালের মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি অত্যধিক উত্তপ্ত হওয়ায় বিশেষজ্ঞ কারিগরি দল সেটি না চালানোর পরামর্শ দেয়। এখন পর্যন্ত এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্রটি চালু করা হয়নি।

গত মঙ্গলবার দুপুরে মেডিকেল কলেজটির রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে এমআরআই যন্ত্রটির কক্ষ তালাবদ্ধ দেখা যায়। যন্ত্রের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির কক্ষও তালাবদ্ধ রয়েছে।

এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান মো. হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, দুই বছর আগে এমআরআই যন্ত্রটি চালু করা হলে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর আর তা চালু হয়নি। যন্ত্রটি সচল করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও কাজ হয়নি।

২০২১ সালের ১১ অক্টোবর জেলা সদর হাসপাতালে এমআরআই যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু দক্ষ টেকনোলজিস্ট না থাকায় এটি চালু করা যায়নি। দীর্ঘ দুই বছর পর গত বছরের অক্টোবরে মাত্র দুজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে কোনোরকমে এমআরআই যন্ত্রটির কার্যক্রম চালু করা হয়। তবে এর দুই সপ্তাহ পর একজন টেকনোলজিস্ট অন্যত্র বদলি হওয়ার পর থেকে আবার যন্ত্রটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, এমআরআই পরীক্ষায় দক্ষ জনবল পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

জেলায় অন্য কোনো সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা রোগনির্ণয় কেন্দ্রে এই যন্ত্র নেই। ওই দুটি হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ দুটি যন্ত্রের ব্যবহার না হওয়ায় রোগীদের অনেকে বিপাকে পড়েন।

প্রায় এক মাস ধরে মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগছেন মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার হিজুলী গ্রামের অতীন্দ্র চক্রবর্তী (৫৩)। তিনি বলেন, চিকিৎসক তাঁকে এমআরআই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা করেন। এতে তাঁকে পরীক্ষা বাবদ অতিরিক্ত টাকা ও বাড়তি যাতায়াত ভাড়া গুনতে হয়েছে।

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমআরআই যন্ত্র দুটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রোগীদের জটিল ও কঠিন রোগনির্ণয়ে ঢাকায় গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যন্ত্র দুটির কার্যক্রম চালু করতে কর্তৃপক্ষকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।