সাতক্ষীরায় এবার ১১ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। বর্গাচাষিদের পাট চাষে প্রতি বিঘায় সাত হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
সাতক্ষীরায় নতুন পাটের আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। পাটের এমন দরপতনে চাষিদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এদিকে পাটের দরপতনের কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়ী পাট কিনছেন না। আর যাঁরা কিনছেন, তাঁদের কাছে কম দরেই চাষিরা পাট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পাট চাষ করতে যা খরচ হয়েছে, বিক্রি করে ওই খরচ উঠছে না। বিশেষ করে ইজারা নিয়ে কিংবা বর্গাচাষিদের বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ সরকারিভাবে সরবরাহ করা রবি পাট-১ (দেশি) জাতের বীজে উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। ফলে লোকসান বেড়েছে। চলতি বছর পাটের মূল্য না পাওয়ায় তাঁরা আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ১১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দেশি জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হেক্টর জমিতে আর তুষা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশি জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৮২ হেক্টর জমিতে আর তুষা জাতের পাট আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি মৌসুমে ২৩৩ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা এলাকার পাটচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গত বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। খরচ বাদ দিয়ে যে পাট হয়েছিল, তাতে তাঁর বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছিলেন এ সময়ে ২ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। খরচ বাদে তাঁর প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে সাত হাজার। একই কথা বলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের পাটচাষি সুশংকর বিশ্বাস, হাচিম গ্রামের প্রশাস্ত ঘোষ, গোবিন্দকাটি গ্রামের জহুরুল ইসলাম ও ওয়ারিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম। তবে নিজের জমি হলে লোকসান কমে দুই হাজার টাকা হবে।
ঝাউডাঙ্গা মোকামের আড়তদার সুব্রত ঘোষ জানান, গত বছর তিনি ২০ হাজার মণ পাট কিনেছিলেন। প্রথম অবস্থায় কিছু লাভে বিক্রি করতে পারলেও পরে লোকসানে বিক্রি করেছেন প্রায় ছয় হাজার মণ। পাটের চাহিদা না থাকায় তিনি এবার পাঠ কেনা বন্ধ করেছেন। একই মোকামের আবদুল খালেক গত বছর পাট কিনেছিলেন আট হাজার মণ। শেষের দিকে ক্রেতা না থাকায় প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। চলতি মৌসুমে পাট উৎপাদনের জন্য কৃষকদের আগাম টাকা দিয়েছিলেন। ওই সব কৃষকদের কাছ থেকে শুধু পাট কিনছেন বাধ্য হয়ে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমি পাট চাষের জন্য উপযোগী করতে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়। তিনবারে নিড়ানির জন্য খরচ হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, বীজ খরচ ৩০০ টাকা, সার ও কীটনাশক ৫ হাজার টাকা, সেচ ৮০০ টাকা, কাটা ৬ হাজার টাকা এবং ধোয়া ও শুকানো ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয় ২২ হাজার ১৫০ টাকা। বিঘাপ্রতি তুষা জাতের পাট উৎপাদন হয় ১০ মণ আর দেশি পাট উৎপাদন হয় ৯ মণ। সেই হিসাবে ১০ মণ পাট বিক্রি হয় ১৮ হাজার টাকায়। পাশাপাশি এক বিঘা জমির পাটখড়ি বিক্রি করা যাচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, পাট উৎপাদনের পরপরই সব কৃষক একসঙ্গে পাট বাজারে নিয়ে গেলে আড়তদারেরা তাঁদের ইচ্ছেমতো মূল্য দেন। যদি কিছুদিন রেখে কৃষক বিক্রি করেন, সে ক্ষেত্রে দাম ভালো পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ হলে কৃষকেরা লোকসানে পড়ত না।